• ||
  • Tuesday, April 30th, 2024
  • ||

সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কাজে তাড়াহুড়োর ক্ষতি

সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কাজে তাড়াহুড়োর ক্ষতি
  • কোনো কাজ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনেকে তাড়াহুড়ো করেন। এটি একটি মন্দ স্বভাব। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘মানুষ সৃষ্টিগতভাবে তাড়াহুড়োপ্রবণ, অচিরেই আমি তোমাদের আমার নিদর্শনাবলি দেখাব; কাজেই তোমরা তাড়াহুড়ো কোরো না।’ (সুরা আম্বিয়া : ৩৭)। কোরআনের অন্যত্র এটাকে মানুষের দুর্বলতারূপে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘মানুষ অত্যন্ত তাড়াহুড়ো প্রবণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ১১)। আয়াত দুটির মূল কথা হলো তাড়াহুড়ো প্রবণতা মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। (তাফসিরে কুরতুবি)
  •  
  • ইসলামে কোনো কাজে তাড়াহুড়া পছন্দনীয় নয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) সব কাজে ধীরস্থিরতা ও গাম্ভীর্য পছন্দ করতেন। সাহাবায়ে কেরামকেও এমনই শিক্ষা দিতেন প্রিয় নবী (সা.)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যখন নামাজের জন্য ইকামত দেওয়া হয় তখন তোমরা দৌড়ে আসবে না, বরং তোমরা গাম্ভীর্য সহকারে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে আসবে। তারপর যতটুকু নামাজ (ইমামের সঙ্গে) পাবে, পড়ে নেবে। আর যতটুকু ছুটে যাবে, (সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে) নিজে পূর্ণ করে নেবে। (বুখারি : ৬৩৬; মুসলিম : ৬০২)
  •  
  • তাড়াহুড়া অনেক সময় ক্ষতি ডেকে আনে। কাজেই কোনো প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে একদম তাড়াহুড়া করা উচিত নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ধৈর্য ও স্থিরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে।’ (তিরমিজি : ২০১২)।
  •  
  • তাড়াহুড়ার কোনো কাজ যথার্থ হয় না; বরং যেকোনো কাজে রাসুল (সা.) উম্মতকে পরামর্শের সুন্নাহ শিখিয়েছেন। ইসতিখারার দীক্ষা দিয়েছেন। যার সবগুলোতেই তাড়াহুড়া বর্জনের শিক্ষা পাওয়া যায়। আল্লামা ইবনুল কাইউম জাওজিয়্যাহ (রহ.) বলেন, তাড়াহুড়াকে শয়তানের কাজ হিসেবে উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে; তাড়াহুড়া করে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বা কোনো কাজ সম্পাদন করা হয়, এতে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, উত্তেজনা কিংবা ক্রোধ শামিল থাকে। এর ফলে বান্দার আত্মমর্যাদা ও ব্যক্তিত্বের হানি ঘটে। ক্ষেত্র বিশেষে এই তাড়াহুড়ার জন্য ব্যক্তিকে অপমান ও অপদস্থতার সম্মুখীনও হতে হয়।
  •  
  • কোনো কারণে কারো ওপর ক্ষুব্ধ হলেও ক্রোধ প্রকাশে তাড়াহুড়া করা মোটেও সমীচীন নয়। এতে একদিন তা আক্ষেপের কারণ হতে পারে। ঠিক তেমনি কাউকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার আগে ভালোবাসা বা ঘৃণা করা কোনোটিই সংগত নয়। কারণ একদিন তা অনুশোচনার উপলক্ষ হতে পারে। মানুষ অন্যের গিবত-শিকায়েত করতেও তাড়াহুড়া করে ফেলে। একজন মানুষের কোনো বিষয় খারাপ লাগতেই পারে। কিন্তু তাকে পর্যাপ্ত সময় পর্যবেক্ষণ না করে সমালোচনায় লিপ্ত হলে একদিন এর জন্য লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসতে পারে। ইসলাম নির্দেশিত ভদ্রতা ও সৌজন্যতা রক্ষা করে চললে, মুমিন ভাইদের হক সম্পর্কে সচেতন থাকলে এই লজ্জাকর পরিস্থিতিতে নিশ্চয়ই কাউকে পড়তে হবে না। সর্বক্ষেত্রে ভারসাম্য ও মধ্যম পন্থা অবলম্বন করাই ইসলামের শিক্ষা। তাই আসুন আমরা তাড়াহুড়ার মানসিকতা পরিহার করি। আল্লাহ সবাইকে তাড়াহুড়ো প্রবণতা পরিহার করে সর্বক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা অবলম্বনের তাওফিক দান করুন।
  •  

লেখক : মুহাম্মদ মিজানুর রহমান

  •  
comment
Comments Added Successfully!