• ||
  • Tuesday, April 30th, 2024
  • ||

সঠিক কর্মপন্থা ও আল্লাহর ওপর ভরসায় সফলতা

সঠিক কর্মপন্থা ও আল্লাহর ওপর ভরসায় সফলতা
  • প্রতিটি কাজের একটি নির্দিষ্ট পন্থা ও পদ্ধতি রয়েছে। তা মান্য করলেই মানুষ সাফল্যের নাগাল পায়। আল্লাহর হুকুম ও বিধান অনেক হেকমতপূর্ণ, যা অনুসরণ করলে মানুষ পরকালে তো সফলতা পাবেই পৃথিবীর জীবনেও সফলতা লাভ করবে। আল্লাহর পাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় চেষ্টার সঙ্গে রয়েছে সফলতা।’ (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত : ৬)। কিন্তু চেষ্টা যদি ভুল কর্মপন্থায় হয়, তাহলে? মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ জন্মগতভাবে যেসব গুণের অধিকারী হয়, সারা জীবনে সাধারণত তার দশ পার্সেন্ট কাজে লাগাতে পারে। এর কারণ হিসাবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উইলিয়াম জেমস বলেন, ‘যে অবস্থানে আমরা যেতে পারি, সেখানে যাওয়া জন্য আমরা প্রস্তুত থাকি না।’ অন্য মানুষের ওপর আমরা অভিযোগ করি যে, অমুকে আমাকে আমার প্রাপ্য দেয়নি, কিন্তু সবার আগে নিজের ওপর এই অভিযোগ করা দরকার- প্রাকৃতিকভাবে আমরা যে উন্নতি ও সফলতার যোগ্যতা রাখি, তার বিপরীতে অনেক কম সাফল্য নিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
  •  
  • প্রত্যেক মানুষের উচিৎ অন্যের দিকে না তাকিয়ে নিজের দিকে তাকানো। কেননা মানুষ নিজেই নিজের দোস্ত, নিজেই নিজের দুশমন। নিজের বাইরে না বড় কোনো দোস্ত আছে, না দুশমন। মানুষ নিজের যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে সফল হতে পারে, আর কাজে লাগাতে না পারলে তার বিপরীতÑ মানে বিফল হয়।
  •  
  • তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, চেষ্টা-প্রচেষ্টা যেন সঠিক পথে হয়। ভুল পথে চেষ্টা-প্রচেষ্টা অনর্থক শক্তি নষ্ট করা ছাড়া কিছু নয়। আগের দিনের মানুষের কাছে সম্পদশালী হওয়ার স্রেফ একটি পন্থা ছিল- লোহাকে সোনা বানানো। তার মহামূল্য সম্পদ বলতে বুঝতো কেবল স্বর্ণ। আলকেমিস্টরা হাজার হাজার বছর ধরে চেষ্টা চালিয়েছে লোহাকে সোনা বানানোর। কিন্তু শেষমেশ ব্যর্থতা আর সময় নষ্ট করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো অর্জন পায়নি। অথচ আল্লাহর দুনিয়ায় এরচেয়ে অনেক বড় সম্ভাবনা ছিল, আর সেটা হলো লোহাকে যন্ত্রে রূপান্তর করা। আজকালকার জমানায় পশ্চিমদেশীয় মানুষেরা এই রহস্য ভেদ করে তারপর মেহনতের বিনিময়ে সেই পরিবর্তন এনেছে। তারা লোহাকে যন্ত্রে রূপ দিয়েছে। তার ফলে তারা স্বর্ণ ও রৌপ্যের চেয়ে মূল্যবান সম্পদের মালিকানা হাসিল করেছে। শুধুমাত্র সঠিক কর্মপন্থাই তাদের এই সাফল্যের মূলমন্ত্র।
  •  
  • কর্মপন্থা নির্ধারণে প্রকৃতির মাঝে আমরা সবচেয়ে বড় শিক্ষা পাই মৌমাছির কাছ থেকে। মৌমাছি আল্লাহর দূত, আল্লাহ তার মাধ্যমে দেখিয়েছেন কীভাবে সঠিক কর্মপন্থা অবলম্বন করতে হবে। মৌমাছিরা সাধারণত ফুলবাগান থেকে অনেক দূরে বাসা বাঁধে। এক-একটা ফুলে খুবই সামান্য মধু থাকে, এই জন্য তাদের দূর থেকে বহুদূরে যেতে হয়, যেন একসাথে অনেক ফুলের মধু আহরণ করতে পারে। সারাদিনই তাদের কার্যপ্রক্রিয়া জারি থাকে। মধু সংগ্রহ করে মৌচাকে জমা করে আবার ছুটে যায় অন্যকোনো ফুলবাগানে। রাত পোহালে মধু আহরণে মৌমাছিরা যখন বাসা থেকে বের হয়, আলো ফোটার বেশ আগে, আবছা অন্ধকার থাকতেই বের হয়। তারপর যখন ফিরে আসে, সন্ধ্যা নামার অনেক আগেই ফিরে আসে। তারা কেন এমন করে? এর কারণ সময়ের পার্থক্য।
  •  
  • সকাল ও সন্ধ্যা যে এক নয়- মৌমাছিরা এই পার্থক্য বোঝে, এবং সে বিষয়ে তারা চৌকস। মধু আহরণের পুরো প্রক্রিয়া যেহেতু দিনের আলোয় সহিসালামতে হয়, অন্ধকারে তাই ভয় থাকে বাসায় ফেরার পথে তারা ভুল করে বসবে। এইজন্যই সকাল-সকাল তারা মধু আহরণে বেরিয়ে পড়ে। কারণ তারা জানে সামনের মুহূর্ত এখনকার চেয়ে আরও উজ্জ্বল। আবার সন্ধ্যা নামার আগেই বাসায় ফিরে আসে, কারণ তারা জানে আরেকটু দেরি করলেই ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
  •  
  • প্রকৃতি থেকে আমাদের এই শিক্ষা নেওয়া উচিৎ যে, সফলতা লাভের পূর্বশর্ত হলো জীবনের প্রত্যেক পদক্ষেপই বোঝে-শুনে দেওয়া। চোখ বুজে একদিকে ছুটে চলা সফলতাপ্রত্যাশীর কাজ নয়। ভবিষ্যৎ সবসময় উজ্জ্বল হয় না, কখনো অন্ধকার হয় কখনো উজ্জ্বল হয়। উজ্জ্বল কেবল তখনই হয় যখন হালহকিকত বোঝে, বুদ্ধিমত্তার সাথে পা ফেলা হয়। চেষ্টা যেন ভুল কর্মপন্থায় না হয়Ñ এই ক্ষেত্রে মৌমাছি আমাদের সতর্ককারী রাহবর। এই কারণে আল্লাহ কোরআনে মৌমাছির কথা আলোচনাকালে বলেন, ‘চিন্তাশীল মানুষের জন্য এতে (মৌমাছির কর্মপন্থায়) অবশ্যই নিদর্শন আছে।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৬৮)। তারপরেও যদি বুঝে-শুনে পা না ফেলি, ভবিষ্যতে যখন বুঝতে পারব, আমরা আলোর দিকে নয় বরং অন্ধকারে যাচ্ছি, তখন আফসোস করেও কোনো লাভ হবে না। তাই সাফল্য পেতে কর্মপন্থা ঠিকঠাক করা চাই, আর এটাই আল্লাহর শিক্ষা। এই শিক্ষা অমান্য করলে চেষ্টা করা হবে বটে, কিন্তু সফলতা পাওয়া যাবে না।
  •  
  • মূল : মাওলানা ওহিদুদ্দিন খান
  • অনুবাদক : মওলবি আশরাফ
  •  
comment
Comments Added Successfully!