• ||
  • Tuesday, April 30th, 2024
  • ||

মানবজীবনে সময়ের গুরুত্ব

মানবজীবনে সময়ের গুরুত্ব

আমাদের জীবনে সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় সময়ের কথা এসেছে। সুরা আসর, সুরা দোহা, সুরা লাইলসহ বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ সময়ের শপথ গ্রহণ করেছেন। ইসলামের প্রতিটি ইবাদত সময়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের সঙ্গে সময়ের সম্পৃক্ততার বিষয় পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে। বলে দাও এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজের সময় ঠিক করার মাধ্যম।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৯)
 
সামাজিক জীবনে পারস্পরিক ওঠাবসা, লেনদেনের স্বচ্ছতা ঠিক রাখার ক্ষেত্রে সময়ের উল্লেখ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। মহানবী (সা.) সবসময় সময়ের প্রতি খেয়াল রাখতেন। অযথা কাজে যেন জীবনের একটি মুহূর্ত নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতেন। সাহাবাদের সময়ের গুরুত্ব বোঝাতেন। অবসর কাজে লাগানোর তাগিদ দিতেন। হাদিস শরিফে এসেছে, মানুষের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ দুটি নেয়ামতের খুব অবহেলা করে। একটি সুস্থতা, অন্যটি অবসরতা। (বুখারি)।
 
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, প্রসিদ্ধ সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, কোনো এক ব্যক্তিকে রাসুল (সা.) উপদেশ দেওয়ার সময় বললেন, তুমি পাঁচটি বিষয়ের পূর্বে পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দাও। ১. বার্ধক্য আসার পূর্বে তোমার যৌবনকে গুরুত্ব দাও, ২. অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে গুরুত্ব দাও, ৩. দারিদ্র্য আসার পূর্বে সচ্ছলতাকে গুরুত্ব দাও, ৪. ব্যস্ততা আসার পূর্বে অবসরতার গুরুত্ব দাও ও ৫. মৃত্যু আসার আগে জীবনের গুরুত্ব দাও। (মুসতাদরাকে হাকিম : ৭৮৪৬)
 
ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, কেয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগ পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কীভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে তা বিনাশ করেছে; তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে এবং তা কী কী খাতে খরচ করেছে এবং সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মুতাবিক কী কী আমল করেছে। (তিরমিজি : হাদিস ২৪১৬)
প্রবাদ আছে, ‘সময়ের করিয়ো যতন, সময় হলো অমূল্য রতন’। বিজ্ঞজনের উক্তি আছে, ‘সময় বড় কৃপণ। সময়কে তোমার সর্বস্ব বিলিয়ে দিলে সময় তোমায় কিছু দেবে। আর সময়কে তোমার কিছু অংশ দিলে সময় তোমায় কচু দেবে।’
 
মোটকথা, সময় মহামূল্যবান সম্পদ। সম্মুখপানে ছুটে চলা বহতা নদী। জীবন থেকে ছুটে যাওয়া কোনো সময় ফিরে আসে না কখনই। একটি দিনের সদ্ব্যবহার আরেকটি দিনকে সুন্দর করে। একটি বছরের যথামূল্যায়ন আরেকটি উজ্জ্বল বছর আনয়ন করে।
 
আমরা একটি হিজরি বর্ষ বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে। শুরু হচ্ছে নতুন বছর। বর্ষবিদায়ের মধ্য দিয়ে আমাদের জীবন থেকেও একটি বছরের বিদায় হলো। এভাবে এক দিন জীবনের বিদায়ও ঘটবে। তাই সময় থাকতেই আমাদের কাজ গুছিয়ে ফেলতে হবে। পরকালীন পাথেয় অর্জনে আজই মনোযোগী হতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে সময়ের গুরুত্ব অনুধাবন করে ভালো কাজ করার তৌফিক দান করুন।

comment
Comments Added Successfully!