• ||
  • Tuesday, April 30th, 2024
  • ||

পরকালে সম্পদের হিসাব দিতে পারবেন তো

পরকালে সম্পদের হিসাব দিতে পারবেন তো

আমিন ইকবাল

পৃথিবীতে টাকা উপার্জনের পথ দুটি। বৈধ পথ ও অবৈধ পথ। সাধারণত বৈধ পথে উপার্জিত টাকার হিসাব থাকে। ব্যবসা বা চাকরির কোন খাত থেকে কত এলো খাতা টানলেই বলতে পারেন মালিক। কিন্তু অবৈধ পথে উপার্জিত টাকার যেমন সংখ্যা জানা থাকে না; তেমনি থাকে না খাতা-পত্রও। ফলে দুদকের নজর পড়লেই হুলস্থূল পড়ে যায়!
     
টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ আল্লাহর দান। তবে যার সম্পদ বেশি, পরকালে তার হিসাব হবে তত কঠিন হবে। দুনিয়ায় যেমন দুদকের কাছে আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে হয়, তেমনি পরকালে আল্লাহর আদালতে ব্যক্তির সমুদয় সম্পদের হিসাব দিতে হবে। হাশরের মাঠে আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে পাঁচটি প্রশ্ন করবেন। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত  রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সেই দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোনো আদম সন্তান তার পা এক কদমও নাড়াতে পারবে না; ১. তুমি তোমার সারা জীবন কোন পথে কাটিয়েছ? ২. যৌবনকালে কোন আমল করেছ? ৩. ধন-সম্পদ কোন পথে উপার্জন করেছ? ৪. কোন পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করেছ? ৫. দীন ইসলাম সম্পর্কে যতটুকু জেনেছ, সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছ।’ (তিরমিজি : ৪/৫৬৯)
     
নবীজি (সা.) অবৈধ উপার্জনকে কেয়ামতের আলামত আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক সময় আসবে যখন সম্পদ কামাই করার ব্যাপারে হালাল-হারামের বিবেচনা করা হবে না।’ (বুখারি : ২০৮৩)। তিনি আরও বলেন, ‘নিশ্চয় কেয়ামতের আলামতের অন্যতম হচ্ছে সুদের প্রসার লাভ করবে।’ (আত-তারগিব ওয়াব তারহিব : ২৪)
দুনিয়াতে যারা বৈধ পথে সম্পদ উপার্জন করে  পরকালে তাদের হিসাব হবে সহজ। অবশ্য বৈধ পথে সম্পদ উপার্জন করেও যারা সম্পদের হক আদায় করে না তথা জাকাত দেয় না, তাদেরও শাস্তি হবে ভয়াবহ। পরকালে এই সম্পদই সাপ হয়ে তাদের দংশন করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা কার্পণ্য করে (আল্লাহ ও বান্দার হক নিয়ে) ওই জিনিসের মধ্যে, যা আল্লাহ তাদেরকে আপন করুণা থেকে (ধন-সম্পদ বা জ্ঞানাকারে) দান করেছেন তারা কখনও যেন ওই কৃপণতাকে নিজেদের জন্য মঙ্গলজনক মনে না করে বরং সেটা তাদের জন্য অকল্যাণকর। তারা যেসব সম্পদের মধ্যে কার্পণ্য করেছিল অচিরেই কেয়ামতের দিন সেগুলো তাদের গলায় শৃঙ্খল হবে এবং আল্লাহ তায়ালাই নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের স্বত্বাধিকার। আর আল্লাহ আমাদের  কৃতকর্ম সম্পর্কে অবগত।’ (সুরা আলে ইমরান : আয়াত ১৮০)
     
নবীজির হাদিসে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত  রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা যাকে ধন-সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে তার জাকাত আদায় করেনি; কেয়ামত দিন তার সম্পদকে এমন এক বিষধর সাপে রূপান্তর করা হবে, যা অত্যধিক বিষাক্ত হওয়ার কারণে তার মাথার পশম থাকবে না এবং চোখের ওপর দুটি কালো তিলক থাকবে। কেয়ামতের দিন ওই সাপ তার গলায় হারের ন্যায় পরিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের উভয় চোয়ালে কামড় দিয়ে ধরবে এবং বলবে  ‘আমিই তোমার ধন-সম্পদ, আমিই তোমার সঞ্চিত ধন ভান্ডার।’ (বুখারি : ১৪০৩; মুসনাদে আহমদ : ৮৬৬১)
     
সম্পদশালীদের মধ্যে যারা জাকাত প্রদান করবে, গরিব মানুষের মাঝে দান সদকার করবে, তাদের বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘যারা তাদের সম্পদ দিন-রাত প্রকাশ্যে, গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে  তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে রাখা আছে। তাদের কোনো ভয় নেই, তারা কোনো আফসোস করবে না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৪)
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সেসব মানুষদের কথা বলেছেন, যারা সবসময় দান করেন। দিনের বেলা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কোনো অভাবিকে দেখলে দান করেন। কেউ তাকে অভাবি মানুষের দুর্দশার কথা শোনালে তিনি দান করার জন্য ছুটে যান। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারিতে দুস্থ মানুষদের দান করার সুযোগ পেলে তিনি কখনও ছেড়ে দেন না। আত্মীয়রা চাওয়ার আগেই তিনি তাদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তাদেরকে সাহায্য করেন।
     
মসজিদে কারও চেহারা দেখে সে কষ্টে আছে মনে হলে, তিনি তার কষ্ট কমাতে এগিয়ে যান। এই ধরনের নিবেদিতপ্রাণ মানুষরা দিনে, রাতে, প্রকাশ্যে, গোপনে যখন যেভাবে পারেন দান করতে থাকেন। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলছেন  এদের পুরস্কার বিশেষভাবে তার কাছেই জমা আছে। এরা কিয়ামতের দিন যখন তার কাছে আসবেন, সেদিন তাদের কোনো ভয়, কোনো আফসোস বা দুঃখ থাকবে না। আল্লাহ তায়ালা এদেরকে বিরাট পুরস্কার দেবেন। এমন পুরস্কার, যা তিনি নিজের কাছে রেখেছেন।
     
তাই আসুন, বাসা কিংবা ব্যাংককে টাকা-পয়সার খনি না বানিয়ে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সম্পদের একটা অংশ গরিব মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দিই। অন্তত সঠিকভাবে জাকাত প্রদান করি। গরিব-অসহায়ের পাশে থেকে মানবতার পরিচয় দিই। বিশেষ করে নিজের সম্পদের হিসাব রাখি; যেন দুনিয়া ও পরকালের আদালতে জবাবদিহি করতে পারি।

comment
Comments Added Successfully!