• ||
  • Tuesday, April 30th, 2024
  • ||

রিজিকের বরকত নষ্ট করে সকালের ঘুম

রিজিকের বরকত নষ্ট করে সকালের ঘুম

ফজরের পর অনেকের ঘুমানোর অভ্যাস। বিশেষ করে শহরের মানুষ তো সকাল আটটা-নয়টা পর্যন্ত ঘুমায়। অনেকে আবার এমন আছেন, যারা ঘুমের কারণে ফজরের নামাজও পড়তে পারেন না। এই অভ্যাস নিঃসন্দেহে খারাপ। ধর্মীয় দিক দিয়ে যেমন নামাজ না পড়া শক্ত গুনাহ, নামাজ পড়ে ফজরের পর ঘুমিয়ে থাকাও শরীরের জন্য ভালো নয়। ফজরের পর কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আজকার করা, একটু হাঁটাচলা করা ইসলামের শিক্ষা।
 
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক হাদিসে এশার পর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে বলেছেন। আর সকালবেলা উম্মতের রিজিকের মধ্যে বরকত দেওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করেছেন। তাই অধিক রাত পর্যন্ত জাগ্রত না থেকে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া সুন্নত। যাতে ফজরের পর ঘুমিয়ে বরকত থেকে বঞ্চিত হতে না হয়।
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামাজের পূর্বে ঘুমানো এবং নামাজের পর অহেতুক গল্প-গুজব করাকে খুব অপছন্দ করতেন। (সহিহ বোখারি : ৫১৪) তবে ভালো ও নেক কাজের জন্য এশার নামাজের পরে জাগ্রত থাকলে সেটা ভিন্ন বিষয়। যেমন, মেহমানের সঙ্গে কথা বলা, ইলমি (জ্ঞানের) আলোচনা করা ও পরিবারকে সময় দেওয়া ইত্যাদি।
 
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অনেকগুলো উপরকারিতা রয়েছে। এর অন্যতম হলো, ফজর নামাজের জন্য খুব সহজে পূর্ণ শক্তি ও চাঞ্চল্যতার সঙ্গে জাগ্রত হওয়া যায়। শরীরে আরামবোধ হয়, কেননা দিনের ঘুম রাতের ঘুমের ঘাটতি পূরণ করতে পারে না। শেষ রাতে তাহাজ্জুদের জন্য জাগ্রত হতে ইচ্ছুক ব্যক্তি সহজে জাগ্রত হতে সক্ষম হন। সুতরাং উত্তম অভ্যাস হচ্ছে, এশার নামাজের পর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়া এবং ফজরের পর না ঘুমানো।
 
সুন্নত হচ্ছে ফজরের পর না ঘুমানো। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু বরকতময় করুন।’ হাদিস বর্ণনাকারী বলেন, ‘এ জন্যই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো যুদ্ধ অভিযানে বাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন।’
হাদিস বর্ণনাকারী হজরত সাখর গামেদি (রা.) ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনিও তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম ভোরবেলা শুরু করতেন। এতে তার ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয় এবং তিনি সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন। (সুনানে আবু দাউদ : ২৬০৬)
পূর্ববর্তী আলেমরা ফজরের পর ঘুমানোকে মাকরুহ মনে করতেন। হজরত উরওয়া ইবনে যুবাইর (রহ.) বলেন, যুবাইর (রা.) তার সন্তানদের ভোরবেলা ঘুমানোর ব্যাপারে নিষেধ করতেন। হজরত উরওয়া (রহ.) বলেন, ‘আমি যখন কারও সম্পর্কে শুনি, সে ভোরবেলা ঘুমায় তখন তার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৫/২২২)।
 
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) তার এক সন্তানকে ভোরবেলা ঘুমাতে দেখে বলেছিলেন, ‘ওঠো! তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছ, যখন রিজিক বণ্টন করা হচ্ছে?’ (যাদুল মায়াদ: ৪/২৪১)
সুতরাং, সফল জীবনের জন্য, জীবনের উন্নতির জন্য সকালে ঘুমের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এ জন্য এশার নামাজের পর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে হবে। অহেতুক গল্প-গুজব করে রাত নষ্ট করা যাবে না। আর ফজরের নামাজ আদায় করে কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আজকার শেষে যার যার কাজে মনোনিবেশ করা, না ঘুমিয়ে হালাল রিজিক অন্বেষণের জন্য বেরিয়ে পড়া। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেককে ফজরের পরের বরকতময় সময়টাকে সৎভাবে কাজে লাগানো এবং হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি সুন্নত সঠিকভাবে আদায় করার তওফিক দান করুন।

comment
Comments Added Successfully!