• ||
  • Thursday, May 2nd, 2024
  • ||

নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশা

নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশা
  • ক্যালেন্ডারের পাতায় দিন-মাস-বর্ষ বিদায়ের মধ্য দিয়ে আমাদের জীবন থেকেও বিদায় নিল একটি বছর। জীবনের এ টার্নিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে একবার কি ভাবতে পারি, আমার জীবনস্রোত কোন দিকে বইছে। উল্টো দিকে বইতে শুরু করলে তো থমকে দাঁড়াতে হবে। ভাবতে হবে, চলার পথে কী কী হারিয়ে এসেছি। সঠিক পথটাই হারিয়ে ফেলিনি তো! তা হলে তো বাঁক নিতে হবে। পথ পরিবর্তন করে সঠিক পথের সন্ধান করতে হবে। উল্টো স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়ার নাম জীবন নয়। বরং স্রোতের বিপরীতে তরীর হাল ধরে গন্তব্যে পৌঁছার নামই জীবন।
  •  
  • জীবনে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জে টিকে থাকতে হলে মানসিকভাবে প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে কার্যত পরিবর্তনের চিন্তা করতে হয়। বাস্তব কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পরিবর্তনের পথ সুগম করতে হয়। চিন্তা-বিলাসিতার মোহ কাটিয়ে প্রকৃত পরিবর্তনের দুয়ারে পৌঁছতে কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরছি, যা অবলম্বনে অন্ধকার জীবনে আলোকছটা পড়তে শুরু করবে ইনশাল্লাহ।
  •  
  • অপরাধ বিষয়ে সচেতনতা
  • অপরাধে জর্জরিত আমাদের জীবন। তাই প্রথমেই অপরাধ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। চিন্তা করতে হবে, আল্লাহবিমুখতা ও অলসতার ফলে সবচেয়ে বড় কোন অপরাধটি আমার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। এর দ্বারা ভেতরে অনুশোচনা তৈরি হবে। ভাবা সহজ হবে, আল্লাহ কত মহান। তিনিই তো আকাশ-জমিনের সৃষ্টিকর্তা। কুল মাখলুকের রিজিকদাতা। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তবু আমি তাঁর সীমা লঙ্ঘন করি! আর তিনি কি না আমার সব ত্রুটি গোপন করে রাখেন! প্রতিনিয়ত রিজিক পৌঁছে দেন! কল্যাণের পথ প্রদর্শন করেন! এই চিন্তার মাধ্যমে আল্লাহ থেকে দূরে সরে যাওয়ার বাস্তবতা উপলব্ধি হবে এবং সঠিক পথে চলার প্রেরণা আসবে।
  •  
  • সঠিক পথে চলার সঙ্কল্প
  • সব বাধা-প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে সরল পথে চলার দৃঢ় সঙ্কল্প করতে হবে। ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলার সঙ্কল্প করলে আল্লাহ সত্যের ওপর অবিচল রাখেন। অন্তর্দৃষ্টি দান করেন। ফলে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনীত বিষয়ের সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারে। দেখতে পারে নিজের অবাধ্যতার কুফল।
  •  
  • খাঁটি অন্তরে তওবা
  • প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে আল্লাহর অপছন্দনীয় সব পথ পরিত্যাগ করে তাঁর পছন্দনীয় পথে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। খাঁটি অন্তরে তওবা করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা নূর, আয়াত : ৩১)। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আমি আল্লাহর কাছে রোজ সত্তর বারেরও অধিক তওবা ও ইসতিগফার করি।’ (বুখারি : ৬৩০৭)
  •  
  • ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন
  • জীবনকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের রঙে রাঙাতে চাইলে দ্বীনি ইলমের বিকল্প নেই। এর জন্য সম্ভাব্য সব পদ্ধতি অবলম্বন করা জরুরি। আলেমদের মজলিসে বসে এবং নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন দ্বীনি বই পাঠের মাধ্যমে দ্বীনের সহি বুঝ সমৃদ্ধ করতে হবে।
  • কোরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা। আমাদের জীবনের বাঁকে বাঁকে শয়তান আখড়া করে রেখেছে। যেকোনো সময় পদস্খলন ঘটাতে ওত পেতে আছে। এ থেকে বাঁচার উপায় একটাই। রাসুল সা. বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দুটি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে নাÑ আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসুলের সুন্নাত।’ (মিশকাত : ১৮৬)। সুতরাং সব ধরনের শিরক, বিদআতের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সমস্ত বিদআত ভ্রষ্টতা। আর সমস্ত ভ্রষ্টতার ঠিকানা জাহান্নাম।’ (তিরমিজি : ২৬৬) 
  •  
  • হারাম ছেড়ে হালালে ফেরা
  • অতীত আগ্রহের বিষয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। মদ, জুয়া, চুরি, ব্যভিচার, গান, চরিত্র বিধ্বংসী ফিল্ম দেখা ছেড়ে হালাল পথে আসার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ধোঁকা, প্রতারণা, অহঙ্কার ও অন্যকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করার প্রবণতা চিরতরের জন্য পরিত্যাগ করে আল্লাহর স্মরণ, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং সুখে-দুঃখে তাঁকে ডাকার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি কোরআন শিক্ষা ও বোঝার চেষ্টা করা, জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা, উলামায়ে কেরামের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তাদের কাছে নিয়মিত যাতায়াত করাকে জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ বানিয়ে নিতে হবে। তা হলেই জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হবে।
  •  
  • অসৎ সঙ্গ ছাড়া
  • সঙ্গ পরিবর্তন করতে হবে। জীবনে পরিবর্তন সাধন-প্রক্রিয়ায় অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করার কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গ লাভ কর।’ (সুরা তাওবা : ১১৯)। অসৎ সঙ্গ ত্যাগ না করে জীবন পরিবর্তনের ইচ্ছাটা মূলত চিন্তাবিলাস। কিয়ামতের দিন পস্তাতে হবে শুধু এই ভেবে যে, কেন সৎসঙ্গ গ্রহণ করলাম না! আল্লাহ বলেনÑ ‘সেদিন জালিম আপন হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আফসোস, আমি যদি রাসুলের সঙ্গে পথ অবলম্বন করতাম!’ (ফুরকান : ২৭)
  •  
  • আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা
  • পরিবর্তনের সবচেয়ে গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। আমাদের সব প্রস্তুতি ব্যর্থ হয়ে যাবে, যদি না তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। সব বাধা-প্রতিবন্ধকতা থেকে উত্তরণের চাবি তাঁর হাতে। দয়ার ভিখারি হয়ে সেই চাবিকাঠি লাভ করে জীবনে সফলতার দ্বার খুলে নিতে হবে। সঠিক পথে পরিচালিত হওয়া, বেশি বেশি তাঁকে স্মরণ করা ও কৃতজ্ঞতা আদায়ের তওফিক কামনা করতে হবে।
  •  
  • ধৈর্য ধারণ ও সাধনা 
  • নিজেকে বদলানো যেন ‘মৃত্যুর পর নতুন জীবন ফিরে পাওয়া’। নতুন জীবনের প্রতিটি ধাপ সফলতার সঙ্গে অতিক্রম করতে প্রচুর ধৈর্য আর কঠোর সাধনার প্রয়োজন। কারণ এই মুহূর্তে এসে স্পষ্ট হয়ে যাবে, কে আসলেই জীবনের পরিবর্তন কামনা করে। আর কে পরিবর্তনের ভান ধরে নিজের সঙ্গে প্রতারণা করে। প্রকৃত পরিবর্তন প্রত্যাশী সর্বদা ধৈর্যের তিক্ততা সহ্য করতে প্রস্তুত থাকবে। আল্লাহর আনুগত্যের জন্য নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করবে। পক্ষান্তরে যে প্রকৃত পরিবর্তন প্রত্যাশী নয়, সে এত ধৈর্য ও কষ্টের ধকল সইতে যাবে না। অল্পতেই আটকে যাবে শয়তানের মারণফাঁদে। তবে সফলতা ও সুসংবাদ প্রথম শ্রেণির জন্য। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে আছেন।’ ( আনকাবুত : ৬৯)
  •  
  • তাই ছাড়তে হবে দুনিয়ার সব রঙিন ফানুস। ফিরে আসতে হবে জান্নাতি কাফেলার সুরভিত সজীব উদ্যানে। কামনা-বাসনার মায়াজাল ছিন্ন করে ফিরতে হবে সেই মহান রবের অভিমুখে। তবেই জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাব আমি, আপনি, আমরা সবাই।
  •  
  • লেখক: আবদুল আজিজ
comment
Comments Added Successfully!