• ||
  • Wednesday, May 1st, 2024
  • ||

মেয়ে শিশু মসজিদে আসা: ইসলাম কী বলে?

মেয়ে শিশু মসজিদে আসা: ইসলাম কী বলে?

সম্প্রতি নরসিংদীর রায়পুরায় এক মেয়ে শিশুকে মসজিদে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসে। গ্রামের এক ব্যক্তি তার কন্যা শিশুকে মসজিদের একেবারে ইমামের পেছনে দাঁড় করায়। এ নিয়ে প্রথমে তর্ক, পরে সংঘর্ষের জের ধরে তা হত্যা পর্যন্ত গড়ায়। ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়, কন্যা শিশুকে মসজিদে নিয়ে যাওয়ার বিধান কী? ঘটনায় প্রাসঙ্গিক ব্যক্তির জন্য তা উচিত হয়েছে কী না? 
এর উত্তর যদি আমরা নবীজি (সা.) এর সুবিশাল হাদিসের ভান্ডারে খোঁজার প্রয়াস পাই তাহলে দেখব, মেয়ে শিশুর জন্য মসজিদে আসা কিংবা অন্য কেউ তাকে নিয়ে আসা- এতে কোন সমস্যা নেই।
হযরত কাতাদা রা. বলেন, মসজিদে বসে আমরা নামাজের অপেক্ষা করছিলাম। রাসূলে কারীম সা. তখন আপন নাতি হজরত উমামা বিনতে জয়নব রা.কে নিয়ে আসেন। তিনি নবী (সা.) এর কোলে ছিলেন। তাঁকে কাঁধে নিয়ে রাসূলে কারীম (সা.) নামাজের ইমামতি করেন। রুকুতে যাওয়ার সময় তাঁকে জমিনে রেখে দিতেন। সিজদা থেকে উঠে তাঁকে আবার কাঁধে নিয়ে নিতেন। (সহিহ বুখারি : ১০৪)
উমামাহ হলো আবুল আস বিন রাবি ইবনে আবদে শামসের ঔরসে রাসুল (সা.) এর মেয়ে জয়নব (রা.)-এর সন্তান। সুতরাং এই কন্যা শিশু শুধু মসজিদে আসেনি; নবীজির (সা.)এর কাঁধে পর্যন্ত চড়েছে। এতে নবীজি (সা.) সামান্যতম বিরক্ত হননি। 
বাংলাদেশ এর আগেও শিশুদের মসজিদে আনা-না আনা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে মেয়ে কিংবা ছেলের কথা স্বতন্ত্রভাবে উঠে আসেনি, যেমনটি এই ঘটনার মধ্য দিয়ে নতুন করে এসেছে। মূল বিষয় হল, ছেলে হোক, মেয়ে হোক, বাচ্চাদের মসজিদে নিয়ে যাওয়ার পূর্ণ অনুমতি রয়েছে। এ ব্যাপারে বেশ কিছু হাদীসের প্রতি আমরা দৃষ্টি দিতে পারি-
১. আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম (সা.) নামাজ পড়তেন, হাসান ও হুসাইন তখন তার পিঠে চড়ে বসতেন। মানুষ তাদেরকে সরিয়ে দিতে চাইতেন। নবিজি সা. তখন বলেন, ‘তাদেরকে ছেড়ে দাও, আল্লাহর শপথ! আমাকে যে ভালোবাসার দাবী করে, সে যেন তাদেরকেও ভালোবাসে। (আহাদিসু বিশানিস সিবতাইন : ২৯৩)
২. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আমরা রাসূলে কারীম সা. এর সাথে নামাজ আদায় করছিলাম। সিজদায় গেলে হাসান ও হুসাইন (রা.) তার পিঠে উঠে যেতেন। নবীজি (সা.) সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় তাঁদেরকে হাত ধরে জমিনে নামিয়ে দিতেন। পুনরায় সিজদায় গেলে তারা উভয় পুনরায় পিঠে চড়ে বসতেন। (আশ শরিআ : ৫/৬১৬১)
৩. আয়শা রা. বলেন, কোনো একদিন এশার নামাজ পড়াতে আসতে নবী সা. একটু দেরি করেন। ফলে মসজিদে উপস্থিত শিশুরা ঘুমিয়ে পড়ে। (সহিহ বুখারি : ১/৮০)
উক্ত হাদিসসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয়, বাচ্চাদের মসজিদে আসা কেবল অনুমোদিত নয়; বরং নামাজের সময় কাতারের সামনে আসা, পিঠে চড়া, কাঁধে ওঠা- এসব ব্যাপারেও সহনশীলতার পরিচয় দেওয়া উচিত।
 নবীজি (সা.) ইমামতির ক্ষেত্রেও বাচ্চাদের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল সা. মসজিদে নববীতে নামাজের ইমামতি করছিলেন। একজন শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে তিনি সংক্ষিপ্ত সুরা দিয়ে নামাজ শেষ করে দেন। (মুসনাদে আহমাদ : ৯৫৮১)
অন্য একটি বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি নামাজে দাঁড়ানোর পর তা দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছা করি। কিন্তু কোনো শিশুর কান্না শোনার পর নামাজ সংক্ষিপ্ত করে ফেলি- এই ভয়ে যে, শিশুটির মা হয়তো কষ্ট পাচ্ছে। (সহিহ বুখারি : ১/১৪৩)
হাদিসগুলো যদি আমরা বারবার পড়ি অনুধাবন করার চেষ্টা করি, তাহলে শিশুদের মসজিদে আসার ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকার সুযোগ নেই। হাদিস থেকে এই বার্তাও স্পষ্ট, আমরা যেন শিশুদের মসজিদের নিয়ে যাই। তাদেরকে মসজিদে আসতে বাধা প্রধান না করি।
পাশাপাশি এও মনে রাখতে হবে, শিশু যদি একেবারে অবুঝ হয়, তাহলে হাদিসে তাদেরকে মসজিদে আসার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ওয়াসিলা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের মসজিদ অবুঝ শিশু ও পাগলদের থেকে দূরে রাখো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭৫০)
নরসিংদীর ঘটনায় দেখা গেছে, বাবা মেয়েটিকে ইমামের পেছনে দাঁড় করিয়েছেন। এটা কি ঠিক? না, এটা ঠিক না। কারণ, হাদিসে বাচ্চাদের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে বড়দের পেছনে। সুতরাং তাদেরকে পেছনে রাখাই উত্তম। যদি বাচ্চা অতিমাত্রায় দুষ্টুমি করে, অপরের নামাজে বিঘ্নতা সৃষ্টি করার আশঙ্কা থাকে, কিংবা হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে তাহলে বড়দের মাঝেই দাঁড় করানো শ্রেয়। এবং এটা সুন্নাহর খেলাফ না।
নবীজি (সা.) বলেছেন, সাত বছর বয়স হলে শিশুকে নামাজের আদেশ দাও, দশ বছর হলে চাপ সৃষ্টি করবে, প্রয়োজনে মৃদু প্রহার করবে। (সুনানে আবু দাউদ : ১/৭০)
সুতরাং বাচ্চাদের ছোট থেকেই নামাজে অভ্যস্ত করানো, মসজিদের সঙ্গে পরিচিত ও ইসলামী অন্যান্য অনুশাসনের ওপর অনুশীলন করানো একজন অভিভাবকের অন্যতম কর্তব্য। এক্ষেত্রে তাদের সাথে রূঢ় আচরণ করা, কিংবা মসজিদে আসতে না দেওয়া শরিয়তের রুচির বিপরীত।
মেয়েরা সাবালক হবার পর যদিও মসজিদে গমনের ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরাম নিরুৎসাহিত করেছেন; প্রকারান্তরে নিষেধ করেছেন তবুও বাচ্চা অবস্থায় তাকে আল্লাহর ঘরে নিয়ে যাওয়া এবং মসজিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়াতে কোন সমস্যা নেই। বরং এর মাধ্যমে মসজিদের প্রতি বাচ্চার ভালোবাসা তৈরি হবে। নামাজ ও কোরআন শেখার প্রতি আগ্রহ জন্মাবে।
 

comment
Comments Added Successfully!