• ||
  • Friday, May 17th, 2024
  • ||

গীবত ব্যভিচার থেকেও গুরুতর অপরাধ

গীবত ব্যভিচার থেকেও গুরুতর অপরাধ
  • গীবত করা একটি নিন্দনীয় কাজ। গীবতের স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান থাকে সে সকলের কাছে ঘৃণিত হয়। কোনো আদর্শবান ব্যক্তির কাছে গীবতের স্বভাব থাকতে পারে না। অধুনা পৃথিবীর মানব সমাজে গীবতচর্চা মারাত্মক ব্যাধি হিসেবে রূপ নিয়েছে। অথচ গীবত করা ইসলামে নিষিদ্ধ। গীবত করা কবিরা গুনাহ। তাই মুসলিম উম্মাহকে গীবত করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শরিয়তের পরিভাষায় গীবত বলা হয় কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষত্রুটি বর্ণনা করা যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয়। জীবিত ও মৃত কোনো ব্যক্তির গীবত করা যাবে না। সে ব্যক্তি মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম হোক। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে মুসলমানদের একে অপরের গীবত করা হারাম ঘোষিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করে? তোমরা তা ঘৃণা করো।’ (সূরা হুজরাত : ১২)  
  •  
  • গীবতকারীর মুক্তির উপায়
  • গীবত ব্যভিচার থেকে গুরুতর অপরাধ। গীবত-পরনিন্দা ইসলাম সমর্থন করে না। এটি ভ্রাতৃত্ববোধকে ধ্বংস করে দেয়। ব্যভিচারের গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করবেন, কিন্তু গীবতের অপরাধ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। কেননা, ব্যভিচার হল আল্লাহর হকের উপর হস্তক্ষেপ। আর শরিয়তে এর সাজার বিধান রয়েছে। কিন্তু গীবতের সম্পর্ক সরাসরি বান্দার হকের সাথে এবং দুনিয়াতে এর সাজার কোনো বিধান নেই। বান্দা মাফ না করলে কখনো মাফ হবে না। তাই গীবত ব্যভিচার থেকে জঘন্য ও গুরুতর। সুতরাং গীবত করা মানে বান্দার অধিকারে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করা। এ অন্যায়ের জন্য গীবতকারী যার গীবত করেছে তার কাছ থেকে সরাসরি ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। এতে গীবতকারীর মুক্তি মিলবে। অন্যথায় গীবতকারীকে পরকালে জাহান্নামের আজাব ভোগ করতেই হবে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, গীবত ব্যভিচার থেকেও জঘন্য। সাহাবিগণ আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! গীবত কিভাবে ব্যভিচার থেকে জঘন্য? তিনি বললেন, কোনো ব্যক্তি ব্যভিচার করে, অতঃপর তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। অপর এক বর্ণনায় আছে, অতঃপর সে তওবা করে, ফলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু গীবতকারীকে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করেন না, যে পর্যন্ত না যার গীবত করা হয়েছে সে ক্ষমা করে দেয়। আরেক বর্ণনায় আছে, রাসুল (সা.) বলেন, ব্যভিচারকারী তওবা করে, কিন্তু গীবতকারীর তওবা নেই। (বাইহাকি)
  •  
  • গীবতের পর অজু করা মুস্তাহাব
  • সাধারণত গুনাহ করার পর অজু করার কথা ইসলামী শরিয়তে রয়েছে। কারণ, গুনাহ দ্বারা উত্তম আমলের প্রতিদান-সওয়াব নষ্ট হয়ে যায়। আর অজুর দ্বারা এর পূর্ণতা লাভ করে। একইভাবে গীবত করাও একেটি গুনাহর কাজ। এমনকি তা কবিরা গুনাহ। তাই গীবত-পরনিন্দা করার পরও অজু করা মুস্তাহাব। নবীজি (সা.) গীবতকারীকে গীবত করার পর অজু করতে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে গীবতকারীর অন্তরে গীবতের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে সতর্কতা সৃষ্টি হয়। হাদিসে আছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একদিন দুই জন লোক জোহর অথবা আসরের নামাজ আদায় করল এবং তারা উভয়েই ছিল রোজাদার। নবী করিম (সা.) নামাজ শেষ করে বললেন, তোমরা উভয়েই যাও, পুনরায় অজু করো ও নামাজ পড়ো এবং তোমাদের আজকের রোজা পূর্ণ করে অন্য কোনো দিন তা কাজা করো। তারা জিজ্ঞাসা করল, কেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেন, তোমরা অমুক ব্যক্তির গীবত করেছ। (বাইহাকি)

  • গীবতের কাফ্ফরা
  • গীবত একটি জঘন্য অপরাধ। আর গীবতকারীর জন্য গীবতের অপরাধ থেকে বাঁচার দুইটি উপায় রয়েছে। এর একটি হল গীবতকারী যার গীবত করেছে তার কাছে গিয়ে সরাসরি ক্ষমা চেয়ে নেওয়া আর দ্বিতীয়টি হল যার গীবত করা হয়েছে সে যদি মারা যায় তার জন্য গীবতকারী সবসময় মাগফিরাত কামনা করা। প্রথম প্রকারের বিধান আমি উপরে উল্লেখ করেছি আর এখানে দ্বিতীয় প্রকার উদ্দেশ্য। সুতরাং গীবতকারী যার গীবত করেছে তার কাছ থেকে যদি জীবতাবস্থায় ক্ষমা চাইতে না পারে তাহলে গীবতকারী তার মাগফিরাতের জন্য সর্বদা দোয়া করবে। এটাই হল গীবতকারীর মুক্তির জন্য সর্বশেষ মাধ্যম এবং তা হবে গীবতের কাফ্ফারা স্বরূপ। হয়তো আল্লাত তায়ালা এ দোয়ার উসিলায় গীবতকারীকে ক্ষমা করবেন এবং তাকে পরকালে জান্নাত দান করবেন। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, গীবতের কাফ্ফারা হল যার গীবত তুমি করেছ তার জন্য তুমি মাগফিরাত কামনা করা। এভাবে বলবে, হে আল্লাহ! আমাদেরকে এবং তাকে ক্ষমা করো। (বাইহাকি)
  •  
  • লেখক : মাওলানা দৌলত আলী খান
comment
Comments Added Successfully!