• ||
  • Thursday, May 2nd, 2024
  • ||

হজের পাঁচ দিনের ধারাবাহিক আমল

হজের পাঁচ দিনের ধারাবাহিক আমল

আরিফ খান সাদ

  • এবার পবিত্র হজ শুরু হচ্ছে আগামী ১৮ জুলাই (৭ জিলহজ) থেকে। হজ মুসলমানদের অন্যতম ফরজ বিধান। হজের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু আমল। ৭ জিলহজ থেকে হজের কাজ শুরু হলেও মূল আনুষ্ঠানিকতা হয় ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত। হজকারীদের জন্য এই পাঁচ দিনের ধারাবাহিক আমলের বিবরণ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
  •  
  • আট জিলহজ :
  • এদিন দুটো কাজ করতে হয়- ১. মক্কার হারাম শরিফ বা বাসা/হোটেল থেকে হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া এবং জোহরের নামাজের আগেই মিনায় পৌঁছা। ২. মিনায় অবস্থান করা। জোহরের নামাজসহ নয় জিলহজ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব এবং সেখানে অবস্থান করা সুন্নাত।
  •  
  • নয় জিলহজ :
  • নয় জিলহজকে বলা হয় ‘ইয়াউমে আরাফা’ বা আরাফা দিবস। এ দিন বিশেষ ফজিলতপূর্ণ এবং এ দিনেই অধিক সংখ্যাক জাহান্নামীকে মুক্তি দেওয়া হয়। আরাফার ময়দানে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় হজের মূল কার্যক্রম। এ দিন চারটি কাজ করতে হয়- ১. ফজরের পর মিনায় গোসল বা অজু করে সকাল সকাল আরাফার ময়দানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া। রওয়ানার সময় তাকবির বলা- ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ’। ২. জোহরের আগেই আরাফার ময়দানে গিয়ে উপস্থিত হওয়া এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করা। আর এটাই হলো হজের অন্যতম রোকন। ৩. আরাফার ময়দানে অবস্থান করে হজের খুতবা শোনা এবং নিজ নিজ তাবুতে জোহর ও আসরের নামাজ নির্দিষ্ট সময়ে আলাদাভাবে আদায় করা। তাওবা-ইসতেগফার, তাকবির, তাসবিহ, তাহলিল ও রোনাজারিতে আত্মনিয়োগ করা। ৪. সন্ধ্যায় মাগরিব না পড়ে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া। মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও ইশার নামাজ এক আজানে আলাদা আলাদা ইকামতে একসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আদায় করা।
  •  
  • ১০ জিলহজ :
  • হজের প্রধানতম কর্মব্যস্ত দিন। এ দিনে হাজিদের পাঁচটি কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়- ১. মুজদালিফায় অবস্থান; মুজদালিফায় সারারাত খোলা আকাশের নিচে মরুভূমির বালুর ওপর অবস্থান করা। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্য উঠার আগে কিছু সময় অবস্থান করা এবং সূর্য ওঠার আগেই মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া। ২. পাথর সংগ্রহ; মিনায় জামরায় (শয়তানকে মারার জন্য) মুজদালিফায় অবস্থানের সময় রাতে কিংবা সকালে কংকর সংগ্রহ করা। ৩. কংকর নিক্ষেপ; ১০ জিলহজ সকালে মুজদালিফা থেকে মিনায় এসেই বড় জামরায় ৭টি কংকর নিক্ষেপ করা। আর তা জোহরের আগেই সম্পন্ন করা। ৪. কোরবানি করা; বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপ করেই মিনায় কোরবানির পশু জবাই করা। ৫. মাথা মুণ্ডন করা; কুরবানির পর পরই মাথা ন্যাড়া করার মাধ্যমে হজের ইহরাম থেকে হালাল হবে হাজি। মাথা মুণ্ডনের মাধ্যমে হাজি ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করাসহ সব সাধারণ কাজ করতে পারলেও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে।
  •  
  • ১১ ও ১২ জিলহজ :
  • এ দুদিন মিলে মোট তিনটি কাজ করতে হয়- ১. তাওয়াফে জিয়ারত; হজের সর্বশেষ রোকন হলো তাওয়াফে জিয়ারত। ১১ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে তাওয়াফে জিয়ারত না করতে পারলে দম বা কুরবানি কাফফারা আদায় করতে হবে। ২. কংকর নিক্ষেপ; ১১ ও ১২ জিলহজ প্রতিদিন মিনায় অবস্থান করা এবং ধারাবাহিকভাবে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরায় ৭টি করে ২১টি কংকর নিক্ষেপ করা। তবে যদি কেউ কংকর নিক্ষেপের আগে কিংবা পরে কাবা শরিফ গিয়ে তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করে, তবে তাকে তাওয়াফের পর আবার মদিনায় চলে আসতে হবে এবং মিনায় অবস্থান করতে হবে। ৩. মিনায় রাত যাপন ও ত্যাগ; ১০ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত মিনার ময়দানেই রাত যাপন করা এবং যারা মিনা ত্যাগ করবেন তারা ১২ তারিখ সূর্য ডোবার আগেই মিনা ত্যাগ করবে। সূর্য ডোবার আগে মিনা ত্যাগ করতে না পারলে সে রাত (১৩ জিলহজ) মিনায় অবস্থান করা। উল্লেখ্য, যদি কেউ ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে মিনা ত্যাগ করতে না পারে কিংবা থাকার ইচ্ছা করে তাকে ১৩ জিলহজ ৭টি করে আরও ২১টি কংকর নিক্ষেপ করতে হবে।
  •  
  • বিদায়ী তাওয়াফ :
  • সারাবিশ্ব থেকে আগত সব হজপালনকারীর জন্য দেশে রওয়ানা হওয়ার আগে পবিত্র কাবায় ত্যাগের আগে বিদায়ী তাওয়াফ করা আবশ্যক। তবে জিলহজ মাসের ১২ তারিখের পর যে কোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফ হিসেবে আদায় হয়ে যায়।
  • প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির কারণে গত বছরের মতো এবারও সৌদি আরবের বাইরে থেকে কেউ হজে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ পাচ্ছেন না। আল্লাহর কাছে কায়মন বাক্যে প্রার্থনা, বিশ্বের এ করোনা দুর্যোগ দ্রুত উঠিয়ে নিন এবং ফিরে আসুক পবিত্র কাবার স্বাভাবিক ইবাদতমুখর পরিবেশ।
  •  
comment
Comments Added Successfully!