• ||
  • Thursday, May 2nd, 2024
  • ||

শবে কদরের ফজিলত ও করণীয়

শবে কদরের ফজিলত ও করণীয়

আল্লাহ অন্যান্য উম্মতের তুলনায় উম্মতে মুহাম্মদীকে কম হায়াত দিয়েছেন। ফলে তারা দেড়শ, দুইশ এমনকি তিনশ' বছরের দীর্ঘ জীবনে আল্লাহর অনেক ইবাদত করার সুযোগ পেতো। উম্মতে মুহাম্মদীর ৬০/৭০ বছরের জীবনে তা কখনোই সম্ভব নয়। তবে আল্লাহ এই উম্মতকে এমন কিছু রাত দান করেছেন, যে রাতে আমলের মাধ্যমে সম্মান ও মর্যাদায় বিগত সকল উম্মতকে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। এমনি একটি রাত 'শবে কদর' বা কদরের রাত্রি।

'শবে কদর' ফারসি শব্দ। এর আরবি 'লাইলাতুল কদর' বা কদর রজনী। অর্থ সম্মানিত মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত, সম্ভাবনাময়, ভাগ্যনির্ধারণী রজনী। আল্লাহ এই রাতের ফযিলত স্বয়ং নিজে বর্ণনা করেছেন। একে কেন্দ্র করে পুর্ণ একটি সুরা অবতীর্ণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন, লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ রাতে ফেরেশতারা ও জিবরিল (আ.) আল্লাহর নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন। এ রাতের ফজর পর্যন্ত প্রশান্তি বর্ষিত হয়।’ (সুরা কদর : ১-৫)
হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এ রাতটি আরো মহিমান্বিত হয়েছে, যখন আল্লাহ এতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশী গ্রন্থ কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। (সুরা কদর : ১)

এ রাতের দু রাকাত নামাজ পূর্বের সকল গুনাহ মাফের কারণ। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাব তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং সওয়াব প্রাপ্তির প্রত্যাশায় লাইলাতুল কদরে কিয়াম (ইবাদত-বন্দেগি ও নামাজ আদায়) করবে, তার পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২০১৪)
এ রাতের কল্যাণ থেকে সেই বঞ্চিত থাকে যে প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত। আনাস (রা.) বলেন, রমজান এলে নবীজি বলতেন, ‘এই মহিমান্বিত মাস উপস্থিত। তাতে একটি রজনী রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত হল সে যেন সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। আর কেবল অভাগাই এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকে।’ (নাসাঈ : ২১০৬)

কদরের রাত্রি ঠিক কবে? 

একবার রাসুল (সা.) ‘লাইলাতুল কদর’ এর ব্যাপারে খবর দিতে বের হলেন। এ সময় দুইজন মুসলমান ঝগড়া করছিলেন। তখন নবী কারিম (সা.) বললেন, ‘আমি আপনাদের ‘লাইলাতুল কদর’ এর ব্যাপারে অবহিত করতে বের হয়েছিলাম। কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হওয়ায় তা (সেই জ্ঞান) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আশা করি, উঠিয়ে নেওয়াটা আপনাদের জন্য বেশি ভালো হয়েছে। আপনারা সপ্তম (২৭ তম), নবম (২৯ তম) এবং পঞ্চম (২৫ তম) তারিখে এর সন্ধান করুন।’ (সহিহ বুখারি: ৪৯)

এ হাদিস থেকে স্পষ্ট, শবে কদরের নির্ধারিত কোন তারিখ নেই। তবে রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে শবে কদর তালাশের নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান কর। (বুখারী : ২০১৭)

তাই তো নবীজি (সা.) শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। আয়িশা (রা.) বলেন, 'রাসুল (সা.)  ওফাতের আগ পর্যন্ত প্রত্যেক রমজানের শেষের ১০ দিন ইতিকাফ করতেন।’ (বুখারি : ২৩২৬)

শবে কদরে করণীয়

রমজানের শেষ দশক শুরু হলে নবীজি (সা.) কোমর বেঁধে নামতেন। তিনি নিজে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং তার পরিবারের সবাইকে (ইবাদতের জন্য) জাগিয়ে দিতেন।’ (বুখারি : ২০২৪)

এছাড়াও কদর লাভের আশায় শেষ দশ দিনে ইতেকাফ করা, বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত করা, দোয়া-দরুদ, দান-সদকা ও তওবা-ইসতেগফার করা উচিত।

নবীজি (সা.) শবে কদরে একটি দুআ পড়ার কথা বলেছেন। হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে তখন কোন দোয়া পড়বো? তখন তিনি বললেন, তুমি বলো,
اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম, তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি : ৩৫১৩)

আমাদের দেশে শবে কদরকে কেন্দ্র করে মনগড়া কিছু আমলের প্রচলন দেখা যায়, যা শরিয়তসম্মত নয়। যেমন ২৭ তারিখকে লাইলাতুল কদর সাব্যস্ত করে মসজিদ ভিত্তিক বিভিন্ন আয়োজন করা। কদরের নামাজ নামে নির্দিষ্ট কোনো নামাজ পড়া, দলবদ্ধভাবে একেক মসজিদে ঘুরে ইবাদত করা, কবর জিয়ারত করা, আতশবাজি ফোটানো ইত্যাদি। এ রাত যাপন উপলক্ষে অহেতুক কোনো অনুষ্ঠান বা মসজিদে কোনো ভোজের আয়োজন করা ইসলামসম্মত নয়। তাই এ থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব।

comment
Comments Added Successfully!