• ||
  • Friday, May 17th, 2024
  • ||

রমজানে দোয়া কবুল হয় যে কারণে

রমজানে দোয়া কবুল হয় যে কারণে

দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। ইবাদতের মগজ। সর্বাবস্থায় বান্দার ভরসাস্থল। যে যখন যেভাবে দরবারে ইলাহিতে দু'হাত মেলে ধরে তিনি তখন সেভাবে তার ডাকে সাড়া দেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে, (বলো) আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে...।’ (সুরা বাকারা : ১৮৬)
দোয়ার শক্তি প্রবল। তা কখনো বিফল হয় না। আজ না হয় কাল, এভাবে না হয় সেভাবে- তা কবুল হবেই। নবী (সা.) বলেন, ‘যে কোনো মুসলমান ব্যক্তি পাপাচার বা আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার দোয়া ব্যতীত যে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তিনটি জিনিসের যে কোনো একটি দান করেন। ১. হয় দ্রুত তার দোয়া কবুল করেন অথবা ২. তা তার পরকালের জন্য সঞ্চিত রাখেন কিংবা ৩. অনুরূপ কোনো ক্ষতি তার থেকে অপসারিত করেন। এক ব্যক্তি বললো, তাহলে সে তো অধিক পরিমাণে দোয়া করতে পারে। তিনি বলেন, আল্লাহ তার চেয়েও অধিক কবুলকারী।’ (আদাবুল মুফরাদ : হাদিস ৭১৫)
রমজানে রয়েছে দোয়ার বিশেষ গুরুত্ব। এ মাসে দোয়া কবুল হওয়ার মুহূর্তগুলো থাকে একেবারে হাতের নাগালে। তার মধ্যে আবার এমন কিছু মুহূর্ত আছে যখন দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। যেমন, ইফতারের মুহূর্ত । এটি রোজাদারের জন্য একটি সেরা সময়। রমজানের বাইরে যা কল্পনা করা অসম্ভব। এ সময় আল্লাহর সামনে বান্দার আনুগত্যের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে। ইফতারের সব আয়োজন সম্পন্ন করেও তা মুখ পর্যন্ত উঠে না, কেবল তারই ভয়ে; শুধু তাঁর নির্দেশের অপেক্ষায়। এ সময় দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করে নেন নিঃসন্দেহে। রাসূল (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয় ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক, ২. রোজাদার যতক্ষণ না ইফতার করে এবং ৩. মজলুমের দোয়া। কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তার দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নিবেন এবং তার জন্য আসমানের দ্বারসমূহ খুলে দেওয়া হবে এবং আল্লাহ্ বলবেন, আমার মর্যাদার শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবো, একটু বিলম্বেই হোক না কেন। (ইবনে মাজাহ : ১৭৫২)
রমজানের বাইরে জুমার দিন সূর্যাস্তের সময় দোয়া কবুল হয়। সুতরাং রমজানের সময় জুমার দিনে ইফতারের সময় দুটি মাকবুল মুহূর্তের সম্মেলন ঘটে। তাই এই মুহূর্তে দোয়া করা উচিত।
আল্লাহর কাছে বান্দার শেষরাতের ইবাদত খুব বেশি পছন্দনীয়। রমজানের বাইরে সে সময়টা কেটে যায় ঘুমের ঘোরে। কিন্তু রমজানে সেহরি প্রয়োজনের সঙ্গে সবাইকেই জাগতে হয়। এটি দোয়া কবুলের মোক্ষম সুযোগ। রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমাদের রব্ব প্রত্যেক রাতে যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকী থাকে তখন পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, আমার কাছে যে দোয়া করবে, আমি তার দোয়া কবুল করব। আমার কাছে যে চাইবে, আমি তাকে দেব। আমার কাছে যে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, তাকে আমি ক্ষমা করে দেব।’ (বুখারি : ৭৪৯৪)
শবে কদরের ফজিলত কমবেশি সবারই জানা। আল্লাহ এ রাত সম্পর্কে বলেছেন, ‘শবে কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা কদর : ৩)। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে শবে কদর অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং কোনো বুদ্ধিমান কী দোয়া কবুলের এমন সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে পারে? রমজানের বাইরে কী আদৌ শবে কদর লাভ করা সম্ভব?
রমজানের মূল্যবান এই মুহূর্তগুলোতে আমরা নিজেদের জন্য দোয়া করব। নিজের সব প্রয়োজন মহান আল্লাহর কাছে তুলে ধরব। পাশাপাশি অন্যের জন্য গুরুত্বের সাথে দোয়া অব্যাহত রাখবো। কেননা, অন্যের জন্য দোয়া অতি দ্রুত কবুল হয়। নবীজি (সা.) বলেন, ‘অনুপস্থিত লোকের জন্য অনুপস্থিত লোকের দোয়া খুব তাড়াতাড়ি কবুল হয়।’ (তিরমিজি : ১৯৮০)
সুতরাং পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন পাড়াপড়শি সবার কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা, তাদের সুস্থতা চেয়ে দোয়া করা, হালাল রিজিক ও পেরেশানিমুক্ত জীবনের জন্য দোয়া করা জরুরি। নিজের ওপর কোনো কোনো না কোনোভাবে যাদের সামান্যতম অধিকার আছে, তাদের জন্য দোয়া করা। যেমন, শিক্ষক, হিতাকাঙ্খী কলিগ, বন্ধু ইত্যাদি
দোয়ায় ব্যাপকতা আনা অধিক উত্তম। সুতরাং সারা বিশ্বের সব মানুষকে দোয়ায় শামিল রাখা উচিত। তাদের জন্য হিদায়াত ও শান্তির দোয়া করা। বিশেষত মুসলিম উম্মার জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করা। উম্মাহর উলামায়ে কেরামের দীর্ঘায়ু ও নিরাপদ জীবনের জন্য দোয়া করা। জালিমের কারাগারে বন্দী নিরপরাধ আলেমদের জন্য দোয়া করা উম্মতের প্রত্যেক সদস্যের অবশ্য কর্তব্য।
মসজিদুল আকসা মুসলমানের প্রথম কিবলা। অভিশপ্ত ইহুদি গোষ্ঠী তা দখল করে আছে যুগ যুগ ধরে। প্রতি রমজানে তারা নির্লজ্জভাবে মুসলমানদের ওপর হামলা চালায়। ফিলিস্তিনের মুসলমানরা জানবাজি রেখে আল্লাহর ঘরের ইজ্জত রক্ষার চেষ্টা করে। কোন ঈমানদার তাদের জন্য দোয়া না করে থাকতে পারে না। এই বরকতের মাসে দোয়া কবুলের প্রতিটি মুহূর্তে চোখের পানি ছেড়ে তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানানো উচিত। তিনি যেন ফিলিস্তিনি মুসলমানদের হেফাজত করেন। ইহুদি গোষ্ঠীকে হেদায়েত দান করেন। অন্যথায় তাদের টুটি চেপে ধরেন। আল্লাহর ঘরের দিকে উৎক্ষেপিত প্রতিটি কালো হাত দুমড়ে মুচড়ে দেন। তাদের যাবতীয় শক্তি-সামর্থ্য নিজেদের জন্য অভিশাপ বানান। মুসলমানদেরকে তাদের বিরুদ্ধে বিজয় দান কর।
এক্ষেত্রে প্রিয় নবীজি (সা.) শেখানো অনেক দোয়া রয়েছে। হুবহু সেগুলোর মাধ্যমে দোয়া করা অধিক উত্তম। এছাড়াও কুনুতে নাজেলা প্রতি যত্নবান হওয়া যেতে পারে। কমপক্ষে নিজের ভাষায় নিজের মতো করে দোয়া তো সবাই করতে পারি। আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।
 

comment
Comments Added Successfully!