• ||
  • Thursday, May 2nd, 2024
  • ||

রমজানের শেষ দশকের করণীয়

রমজানের শেষ দশকের করণীয়

১২ মাসের শ্রেষ্ঠ মাস রমজান। আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমাদের জীবনডায়েরিতে আরেকটি রমজান যোগ হয়েছে। আমরা তার দুই দশক পার করে এখন শেষ দশকে উপনীত। অর্থাৎ রমজানের অধিকাংশই চলে গেছে। তবে তার মহান অংশ রয়ে গেছে। যে অংশের প্রতি রাতে রয়েছে শবে কদর লাভের সমূহ সম্ভাবনা। যে তা লাভ করবে সে বড়ই সৌভাগ্যবান। আর যে বঞ্চিত হবে সে প্রকৃত অর্থেই বঞ্চিত ও হতভাগা। সুতরাং সৌভাগ্যবানদের কাতারে শামিল হতে জানতে হবে, শেষ দশকে আমাদের কী কী করণীয়। নিম্নে তার কয়েকটি আলোকপাত করা হলো।

এক. 
শেষ দশকের সর্বপ্রথম করণীয় ইতিকাফ করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরতের পর আমৃত্যু প্রতি বছর ইতিকাফ করেছেন। শত ব্যস্ততায়ও তা ছাড়েননি।আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তাঁর সহধর্মিণীগণও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন। (বুখারী : ২০২৬)

দুই.
শবে কদর তালাশ করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে শবে কদর তালাশের নির্দেশ দিয়েছেন। ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমরা তা (লাইলাতুল কদর) রমজানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর। লাইলাতুল কদর (শেষ দিক হতে গণনায়) নবম, সপ্তম বা পঞ্চম রাত অবশিষ্ট থাকে। (বুখারী : ২০২১)। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান কর। (বুখারী : ২০১৭)
সুতরাং প্রত্যেক বেজোড় রাতে নিজে তো ইবাদতে মগ্ন হব। পরিবার পরিজনদেরও তাতে উদ্বুদ্ধ করব। আয়েশা (রা.) আরো বলেন, যখন রমজানের শেষ দশক প্রবেশ করত, তখন রাসূল (সা.) রাতে নিজে জাগতেন, নিজ পরিজনদেরকেও জাগাতেন, কঠোর পরিশ্রম করতেন এবং কোমরে লুঙ্গি বেঁধে নিতেন। (মুসলিম : ১১৭৪) 
শবে কদর তালাশের উদ্দেশ্যে আমরা বেজোড় রাতগুলোতে নিম্ন-বর্ণিত আমল করতে পারি।

ক. নফল নামাজ আদায় করা। দুই দুই রাকাত যত রাকাত পড়া যায়। আবূ হুরায়রাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমাজান মাসে ঈমান ও একান্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে সিয়াম পালন করবে তার পূর্ববর্তী সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমানসহ ও একান্ত আল্লাহর সন্তষ্টির নিমিত্তে সলাত আদায় করবে তারও পূর্ববর্তী সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (মুসলিম : ১৬৬৬)

খ. কুরআন তিলাওয়াত করা। আবূ উসামাহ আল বাহিলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআন পাঠ কর। কারন কিয়ামাতের দিন তার পাঠকারীর জন্য সে শাফা’আতকারী হিসেবে আসবে...।’ (মুসলিম : ১৭৫৯)

গ. হাদিসে বর্ণিত বিভিন্ন ফজিলতপূর্ণ তাসবিহ আদায় করা। যেমন, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার। সুবহানাল্লাহিওয়াবিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযিম ইত্যাদি। 

ঘ. দোয়া করা। নিজের গুনাহের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া। শবে কদরে রাসুল (সা.) একটি দুআ বেশি বেশি করতেন। তা হলো, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া, ফা'ফু আন্নি। (অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।)

ঙ. সামান্য পরিমাণ হলেও দান করা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যা দান করবে, তা তোমাদেরই জন্য থাকবে।’ (আলি ইমরান : ২৭২)

তিন.
ফিতরা আদায় না করে থাকলে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই ফিতরা আদায় করে দেওয়া। ইবনু উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিন সকালে ঈদের নামাজ আদায় করতে যাওয়ার পূর্বে ফিৎরা আদায়ের নির্দেশ দিতেন। (তিরমিজি : ৬৭৭)
উল্লেখ্য, কদরের রাতের নির্ধারিত কোনো নামাজ নেই। বরং স্বাভাবিক সময়ের মতো নফলের নিয়তে দুই দুই রাকাত করে যত ইচ্ছে নামাজ আদায় করবে।
 

comment
Comments Added Successfully!