• ||
  • Thursday, May 2nd, 2024
  • ||

ঈদুল ফিতর : করণীয়, বর্জনীয়

ঈদুল ফিতর : করণীয়, বর্জনীয়

টানা এক মাস সিয়াম সাধনার পর মুমিনের মহা আনন্দ ঈদ। আল্লাহর পক্ষ থেকে রোজাদারের জন্য পুরষ্কার বিতরণদিবস। এদিন আল্লাহ মেজবানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। আর রোজাদার মুমিনগণ হন তাঁর বিশেষ মেহমান। তাই বছরের সবদিন রোজা রাখা অনুমোদিত হলেও ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। হাদিসে এসেছে, রসূলুল্লাহ (সা.) দুদিন সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন। ঈদুল ফিতরের দিন, আর দ্বিতীয় হলো যেদিল তোমরা কুরবানীর গোশ্‍ত খেয়ে থাক। (মুসলিম : ২৫৬১)
তখন হিজরতের দ্বিতীয় বছর। আনাস ইবনু মালিক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনায় এসে দেখেন, মাদিনাবাসীরা নির্দিষ্ট দুটি দিনে খেলাধূলা ও আনন্দ করে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, এ দুটি দিন কিসের? সকলেই বললো, জাহিলী যুগে আমরা এ দু দিন খেলাধূলা করতাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, মহান আল্লাহ তোমাদের এ দুদিনের পরিবর্তে উত্তম দু’টি দিন দান করেছেন। তা হলো, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিন।(আবু দাউদ : ১১৩৪)

এভাবেই সূচনা হয় মুসলিম উম্মাহর সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ও ঐক্যের প্রতীক পবিত্র ঈদের। তবে অন্যান্য ধর্মের ন্যায় মুসলমানের জন্য ঈদ নিছক উৎসব নয়; বরং তা একটি মাহান  ইবাদতও বটে। ফলে তারা সূর্যোদয়ের পর ঈদগাহের দিকে রওনা হয় আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করতে করতে - 'আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহ আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ'।
তারপর তারা আল্লাহর দরবারে সিজদাবনত হয়। ঈদের নামাজ আদায় করে। দীর্ঘ এক মাসের ইবাদত বন্দেগী কবুল হওয়ার জন্য তাঁর দরবারে কাকুতি জানায়। কারণ, তারা বিশ্বাস করে, রমজানের রোজা ও সারা মাসের ইবাদত মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়াই ঈদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এতেই নিহিত ঈদের সব আনন্দ উৎসব। অন্যথায় সবই বিফল। 

ঈদ আমাদের জন্য একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান নিয়ে আসে। এজন্য ঈদগাহে আসার পূর্বেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে দেওয়া কর্তব্য। ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সা.) রোযাদারের অনর্থক কথাবার্তা ও অশালীন আচরণের কাফফারাস্বরূপ এবং গরীব-মিসকীনদের আহারের সংস্থান করার জন্য সদাকাতুল ফিতর (ফিতরা) নির্ধারণ  করেছেন। যে ব্যক্তি ঈদের সলাতের পূর্বে তা পরিশোধ করে (আল্লাহ্র নিকট)-তা গ্রহণীয় দান। আর যে ব্যক্তি ঈদের সলাতের পর তা পরিশোধ করে, তাও দানসমূহের অন্তর্ভুক্ত একটি দান। (ইবনে মাজাহ : ১৮২৭)

ঈদের দিন ঈদগাহে আসার পূর্বে ও পরে কিছু সুন্নাত রয়েছে। সুন্নাতগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়া সবার কর্তব্য। যেমন-

১. অন্যদিনের তুলনায় সকালে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। (বায়হাকি : ৬১২৬)

২. মিসওয়াক করা। (তাবয়ীনুল হাকায়েক : ১/৫৩৮)

৩. গোসল করা। (ইবনে মাজাহ : ১৩১৫)

৪. শরীয়তসম্মত সাজসজ্জা করা। (বুখারি : ৯৪৮)

৫. সামর্থ অনুপাতে উত্তম পোশাক পরিধান করা। (বুখারি : ৯৪৮)
৬. সুগন্ধি ব্যবহার করা। (মুস্তাদরাকে হাকেম : ৭৫৬০)

৭. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার আগে মিষ্টি জাতীয় যেমন খেজুর ইত্যাদি খাওয়া। তবে ঈদুল আযহাতে কিছু না খেয়ে ঈদের নামাযের পর নিজের কুরবানীর গোশত আহার করা উত্তম। (বুখারি : ৯৫৩)

৮. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। (আবু দাউদ : ১১৫৭)
৯. ঈদুল ফিতরে ঈদগাতে যাওয়ার পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা। (দারাকুতনি : ৬৯৪)
১০. ঈদের নামায ঈদগাহে আদায় করা, বিনা অপরাগতায় মসজিদে আদায় না করা। (বুখারি : ৯৫৬)
১১. যে রাস্তায় ঈদগাতে যাবে, সম্ভব হলে ফিরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরা। (বুখারি : ৯৮৬)
১২. পায়ে হেটে যাওয়া। (আবু দাউদ : ১১৪৩)
১৩. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার সময় আস্তে আস্তে এই তাকবীর পড়তে থাকা- اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
তবে ঈদুল আযহায় যাবার সময় পথে এ তাকবির আওয়াজ করে পড়তে থাকবে। (মুস্তাদরাকে হাকেম : ১১০৫)

আমাদের সমাজে ঈদের দিন সবাই একে অপরকে ঈদ মোবারক জানায়, এমনিভাবে নামাজের পর পর সবাই একে অপরের সাথে মুআনাকা করে- হাদীসে এর বিশেষ কোন ভিত্তি পাওয়া যায় না। তবে দেশীয় সংস্কৃতি হিসেবে তা অবৈধ বলেও বিবেচিত হবে না। এ ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামের আমল লক্ষ্য করা সবচেয়ে নিরাপদ। তারা ঈদের দিন পরস্পরের সাক্ষাতের সময় বলতেন, 
تَقَبَّلَ اللَّهُ مِنَّا وَمِنْك
(আল্লাহ আমার ও তোমার ইবাদত কবুল করুন।)

ঈদের উৎসবে একটু আনন্দের মধ্যে থাকা, খেলাধুলা করা বা উপভোগ করার শিক্ষা আমরা নবীজির জীবন থেকে পাই। আয়েশা (রা.) বলেন, এক ঈদের দিন হজরত আবু বকর (রা.) আমার ঘরে এলেন। সেখানে তখন দু’জন মেয়ে বুআস যুদ্ধের গান গাইছিল। তারা গায়িকা ছিল না। হজরত আবু বকর (রা.) ওই মেয়ে দুটোকে শক্ত ধমক দিয়ে বললেন, শয়তানি বাদ্য! তাও রাসুলের ঘরে! রাসুল (সা.) বললেন, আবু বকর! ওদের ছেড়ে দাও। প্রতিটি জাতিরই ঈদ ও খুশির দিন থাকে। আজ আমাদের ঈদের দিন। (বুখারি : ৯৫২)

তবে এই আনন্দ উৎসবের নাম করে কখনই কোন হারামে লিপ্ত হওয়া কাম্য নয়। বৈধতার সীমায় থেকে যত রকম আনন্দে মেতে ওঠা যায়, তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু ঈদের দিন জোরে জোরে গান বাজনা করা, খেলাধুলার নামে বিপুল টাকা অপচয় করা, মহিলগণ বেপর্দা চলাফেরা করা, আগের রাতে আতশবাজি ফুটিয়ে মানুষকে কষ্ট দেওয়া-এসব কোন মুসলমানের ঈদের উৎসব হতে পারে না। এ থেকে নিজে বেঁচে থাকা জরুরি। নিজের আয়ত্তাধীন সকলকে সতর্ক করা অপরিহার্য দায়িত্ব।

comment
Comments Added Successfully!