• ||
  • Friday, May 17th, 2024
  • ||

ইফতার করলে ও করালে কী সওয়াব

ইফতার করলে ও করালে কী সওয়াব

সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় ‘ইফতার’ করা রোজাদার মুমিনের জন্য পৃথিবীর বুকে জান্নাতি আয়োজন; আনন্দঘন মুহূর্ত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি আনন্দ হচ্ছে যখন সে ইফতার করে। আরেকটি হচ্ছে যখন সে প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।’ (তিরমিজি : ৭৬৬)
ইফতার দ্রুত করা উত্তম। যারা দ্রুত ইফতার করে তারা আল্লাহর অধিক প্রিয়। এর মধ্যেই মুসলমানদের কল্যাণ নিহিত। দ্রুত ইফতার করার মাধ্যমে আমাদের ও ইহুদি খ্রিস্টানদের রোজার পার্থক্য তৈরি হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয়, যারা দ্রুত ইফতার করে।’ (তিরমিজি, আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬০, পৃষ্ঠা : ১৩১)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘যত দিন লোকেরা ওয়াক্ত হওয়ামাত্র ইফতার করবে, তত দিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।’ (বুখারি : ১৮৩৩)
অন্য হাদিসে রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)  বলেন, ‘সে পর্যন্ত দ্বীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে, যে পর্যন্ত মানুষ শিগগির ইফতার করবে। কেননা, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বিলম্বে ইফতার করত।’ (মুসনাদে আহমাদ)।
ইফতারের প্রস্তুতি একটু আগ থেকে শুরু করা চাই। কেননা ইফতার সামনে রেখে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।  হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রোজাদারের দোয়া আল্লাহর কাছে এতই প্রিয় যে, আল্লাহ রমজানের সময় ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, ‘রমজানে তোমাদের পূর্বের দায়িত্ব মওকুফ করা হলো এবং নতুন দায়িত্বের আদেশ করা হলো, তা হলো আমার রোজাদার বান্দারা যখন কোনো দোয়া মোনাজাত করবে, তখন তোমরা আমিন! আমিন!! বলতে থাকবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)।
সুতরাং এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পেয়াজু-আলুর চপ, কিংবা ছোলা-সালাদ নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
ইফতার যেকোনো হালাল খাবার দ্বারা করা যায়। বিশেষ কোন খাবার না থাকলে শুধু পানি ও খেজুর দ্বারা ইফতার করাই যথেষ্ট। রাসুল (সা.) খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের আগে ইফতার করতেন কয়েকটি টাটকা খেজুর দিয়ে। যদি তিনি টাটকা খেজুর না পেতেন তাহলে শুকনা খেজুর (খুরমা) দিয়ে ইফতার করতেন। আর তাও যদি না পেতেন, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন। (আবু দাউদ ও তিরমিজি)। সুতরাং ক্ষুদা লাগেনি, শরীরে অনেক শক্তি রয়েছে, এ জাতীয় নানা বাহানায় ইফতার না করা একেবারেই অনুচিত। সুন্নতপরিপন্থী কাজ।
ইফতার করা যেমন ফজিলতের, তেমনি ইফতার করানো আরো অনেক বেশি ফজিলতের। একাধিক হাদিসে রাসুল (সা.) অন্যকে ইফতার করাবার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। তা হোক একটি খেজুর কিংবা সামান্য পানি দিয়ে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াব কম করা হবে না।’
সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘পানিমিশ্রিত এক পেয়ালা দুধ বা একটি খেজুর অথবা এক ঢোঁক পানি দিয়েও যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও সেই পরিমাণ সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে, আল্লাহ তাআলা তাকে হাউজে কাউসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন, যাতে সে জান্নাতে প্রবেশ করার আগপর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ)
রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘আল্লাহ সমপরিমাণ সওয়াব ওই ব্যক্তিকে দান করবেন যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে সামান্য দুধ দিয়ে কিংবা খেজুর দিয়ে কিংবা পানির শরবত দিয়ে ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে পেট পুরে আহার করাবে আল্লাহ তায়ালা (কিয়ামতের দিন) তাকে আমার হাউজে কাউসারের পানি পান করিয়ে পরিতৃপ্ত করবেন। এ পানি পান করার পর জান্নাতে প্রবেশ করার আগে সে আর তৃষ্ণার্ত হবে না। (মিশকাত শরিফ)
ব্যাক্তি উদ্যোগে কিংবা সামাজিকভাবে ইফতারের আয়োজন করা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ও পরস্পর হৃদ্যতা তৈরির অনন্য মাধ্যম। তাই আমাদের এই গৌরবময় ঐতিহ্যকে ধরে রাখা আমাদেরই কর্তব্য। 

comment
Comments Added Successfully!