• ||
  • Thursday, May 2nd, 2024
  • ||

ইতিকাফ : আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের সুযোগ

ইতিকাফ : আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের সুযোগ

ইতিকাফ রমজানের বিশেষ এক আমল। আল্লাহর সাথে বান্দার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার মোক্ষম সময়। টানা দশদিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম স্থান মসজিদে অবস্থান করে নিজেকে গুনাহের পঙ্কিলতা থেকে বিশুদ্ধ করে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। তাছাড়া হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত কদরের রাত। প্রত্যেক মুমিনের দিলের তামান্না এই রাত লাভ করা। ইবাদত বন্দেগি করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। ইতিকাফই হলো মুমিনের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের সহজ ও নিরাপদ উপায়। এতে করে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় শবে কদর ভাগ্যে জুটবেই কোনো সন্দেহ ছাড়া। তাই তো যুগে যুগে আল্লাহর প্রিয় বান্দারগণ শেষ দশকে সব কিছু পেছনে ফেলে ইতিকাফ করতেন।

ইতিকাফের পরিচয়
ইতিকাফ শব্দের অর্থ, অবস্থান করা, আটকে রাখা। শরিয়তের পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয়, ইতিকাফের নিয়তে পুরুষের এমন মসজিদে অবস্থান করা, যেখানে পাঁচওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয়। এবং ইতিকাফের নিয়তে মহিলারা নিজ গৃহে নামাজের স্থানে অথবা ঘরের এক কোনে অবস্থান করা।

ইতিকাফের গুরুত্ব
হজরত উমর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘নবী কারিম (সা.) রমজান মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন।’ (বুখারি, মুসলিম)। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.) রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ পালন করতেন। তাঁর ওফাতের আগ পর্যন্ত তিনি ইতিকাফ পালন করে গেছেন। তারপর তাঁর সম্মানিত স্ত্রীগণ পালন করেছেন’। আয়েশা (রা.) আরো বলেন, ‘যখন রমজানের শেষ দশক প্রবেশ করত, তখন রাসূল (সা.) রাতে নিজে জাগতেন, নিজ পরিজনদেরও জাগাতেন, কঠোর পরিশ্রম করতেন এবং কোমরে লুঙ্গি বেঁধে নিতেন।’ (মুসলিম : ১১৭৪) 

ইতিকাফের ফজিলত
হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করবে সে দুটি ওমরাহ ও দুটি হজ্বব আদায় করার সওয়াব পাবে।’ (বুখারি শরিফ)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে ইতিকাফ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার এবং জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করবেন, প্রত্যেক পরিখার প্রশস্ততা দুই দিগন্তের চেয়েও বেশি।’ (বাইহাকি)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ইতিকাফকারী নিজেকে পাপ থেকে মুক্ত রাখে এবং তাঁর জন্য পুণ্যসমূহ জারি রাখা হয়। (মিশকাত)। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ইতিকাফকারী গোনাহ থেকে বিরত থাকে। তার জন্য আমল করা ব্যতীত অন্যান্য নেককারদের মতো নেকী লেখা হয়। (ইবনে মাজাহ : ১৭৮১)

ইতিকাফের রুকন
ইতিকাফের প্রধান রুকন হল, ইতিকাফকারী সর্বদাই মসজিদের সীমানার ভেতরে থাকবে। অতি প্রয়োজন ছাড়া একটু সময়ের জন্যও মসজিদের বাহিরে যাবে না। ইতিকাফকারী যদি শরয়ী কারণ ছাড়া কিছু সময়ের জন্যও বাহিরে যায় তাহলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায়। (সহিহ বুখারি : ২০২৯)

ইতিকাফের প্রকারভেদ
ইতিকাফ তিন প্রকার: 

১. ওয়াজিব। যেমন, মান্নতের ইতিকাফ।
২. সুন্নাত। যেমন, রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ।
৩. নফল। বছরের যে কোন সময়ের ইতিকাফ।

ইতিকাফের হুকুম
রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করা সমস্ত মহল্লাবাসীর উপর সন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া। যদি মহল্লার একজন ইতিকাফ করে, তাহলে সবার পক্ষ থেকে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। আর যদি কেউ ইতিকাফ না করে মহল্লার সব মানুষ গুনাহগার হবে।

মহিলাদের ইতিকাফ
কোনো মহিলা ইতিকাফ করতে চাইলে বাড়ির কোনো একটি কামরায় ইতিকাফ করতে পারে। আর ওই কামরা তার জন্য মসজিদের মতো। অর্থাৎ ওই কামরা থেকে প্রয়োজন ছাড়া বের হতে পারবে না। যদি বের হয়, তাহলে ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। (আলমগিরি: ২/২১১)

ইতিকাফে করণীয়
১. সর্বদা মসজিদে অবস্থান করা। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ব্যতিত এক মুহূর্তের জন্যও বাইরে না যাওয়া। 
২. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে তাকবিরে উলার প্রতি গুরুত্বারোপ করা। আজানের পর পর কাতারে বসে নামাজের অপেক্ষা করা। নামাজের পর মাসনুন দুআসমূহ আদায় করা।
৩. সর্বক্ষেত্রে নবীজি (সা.) এর সুন্নাতের প্রতি যত্নবান থাকা। যেমন, মসজিদে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার সময়, খাবারের সময়, ঘুমাবার সময় ইত্যাদি।
৩. মসজিদের আদবের প্রতি লক্ষ্য রাখা। অযথা কথা বলা, চেঁচামেচি করা, হৈ হুল্লোড় করা, দৌড়াদৌড়ি করাÑ এসব মসজিদের সাথে বেয়াদবি। আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ।
৪. অধিক পরিমাণে নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, যিকির আযকারে লিপ্ত থাকা। শেষ রাতে কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদের ইহতিমাম করা। বেজোড় রাত্রিগুলোতে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া। 
৫. নিজের সামানাপত্র গুছিয়ে এক পাশে সাজিয়ে রাখা। যেখানে সেখানে লুঙ্গি গামছা ঝুলিয়ে না রাখা। সবসময় মসজিদ পরিচ্ছন্ন রাখতে সচেষ্ট থাকা। 

যেসব কারণে ইতিকাফ নষ্ট হয়
১. ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় বিনা কারণে মসজিদ থেকে বের হওয়া।
২. শরঈ প্রয়োজন (ফরজ গোসল, জুমার নামাজ) ছাড়া গোসল করা।
৩. স্ত্রী সহবাস বা তার আনুষাঙ্গিক কর্মে লিপ্ত হওয়া।
৪. নারীর ইতিকাফ অবস্থায় হয়েজ শুরু হওয়া।
এসব কারণে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। এবং পরবর্তীতে কাযা আদায় করে নিতে হবে।
 

comment
Comments Added Successfully!