• ||
  • Thursday, May 2nd, 2024
  • ||

হিজাবের মর্যাদা রক্ষা করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

হিজাবের মর্যাদা রক্ষা করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

পর্দা আল্লাহর ফরজ বিধান। নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত যেমন ফরজ বিধায় সর্বোচ্চ গুরুত্বের আসনে সমাসীন, তেমনি প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কা নারীর ক্ষেত্রে পর্দা মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ বিধান। আল্লাহ বলেন, 'হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।' (সুরা আহযাব : ৫৯)
বেপর্দা নারীর ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নায় কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, কাপড় পরিহিতা উলঙ্গিনী এবং পুরুষদেরকে নিজের প্রতি আকৃষ্টকারিনী স্ত্রীলোকগণ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না, বরং তারা বেহেশতের সুগন্ধও পাবে না। অথচ ঐ সুগন্ধ পাঁচশত বছরের দূরত্ব হতে অনুভূত হয়। (মুসলিম : ২১২৮)
কোরআন সুন্নাহ নারীর সর্বাঙ্গ পর্দাবৃত রাখার নির্দেশ স্থলে বেশ কয়েকটি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, নিকাব, খিমার, হিজাব ও জিলবাব ইত্যাদি। নিকাব হলো, যা চেহারার ওপর ফেলে রাখা হয়। এবং এর মাধ্যমে চেহারার সৌন্দর্য অদৃশ্য থাকে।খিমার হলো, লম্বা স্কার্ফ, যা মাথা ও মুখ ঢেকে রাখে। জিলবাবা হলো, জুব্বার ন্যায় ঢিলেঢালা পোশাক, যা নির্ধারিত পোশাকের ওপর পরিধান করা হয়।আর কুরআনে ব্যবহৃত হিজাব হলো, নারী কর্তৃক পুরুষের সামনে গোপনীয়তা রক্ষা করা। চাই ঘরের ভেতরে থেকে হোক, দেয়ালের ওপাশ থেকে হোক, কিংবা দরজায় ঝুলানো পর্দার আড়াল থেকে হোক।বুঝা গেল, নিকাব, খিমার ও জিলবাব হলো নির্ধারিত অঙ্গের পর্দা রক্ষার জন্য। আর হিজাব হলো পূর্ণাঙ্গরূপে পর্দা করার জন্য। কোরআন সুন্নাহর দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি মুসলিম নারীর জন্য এই হিজাব রক্ষা করা ফরজ।

হিজাব শুধু একটি পোশাকের নাম নয়। এটি মহান আল্লাহর হুকুমের সামনে বান্দার দ্বিধাহীন আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে চৌদ্দশ বছরের মহীয়সী নারীদের ঐতিহ্য। স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন ও পুতঃপবিত্র ইসলামী সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ এটি। মুসলিম মানসে এর স্থান অন্তরের গভীর থেকে গভীরে। এর মাধ্যমে লাজুকতা ও শালীনতা রক্ষা পায়। সংযম, সচ্চরিত্র ও লজ্জাশীলতার মতো উন্নত চারিত্রিক গুণাবলীর অনুশীলন হয়। অশ্লীলতা ও যথেচ্ছাচারের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা হয় নিয়ন্ত্রিত।
তবে পশ্চিমা সংস্কৃতির আগ্রাসনে, জীবনের সর্বক্ষেত্রে আধুনিকতার অপরিহার্য উপস্থিতিতে হিজাবের উপরিউক্ত অর্থে সংকোচন আসতে শুরু করে। আগে যা মানুষ ঈমানী দায়বদ্ধতা ও লজ্জাশীলতার অবস্থান থেকে পরিধান করতো কাল পরিক্রমায় তা অনেকটা বোঝায় পরিণত হয়েছে। ফলে এই হিজাবের ভেতরও ফ্যাশন শুরু হয়েছে। পর্দার মূল উদ্দেশ্য ক্ষুণ্ন করে তা নারীর শরীরের সৌন্দর্য প্রদর্শনের একটি মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই এখনো হিজাব পরিধানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই নারীরা নামেমাত্র স্টাইলিস্ট হিজাব পরে দায় মুক্ত হয়। দায়টা হলো ইসলাম ও মুসলমান হওয়া।
সম্প্রতি হিজাবের অর্থ আরো সংকুচিত হয়েছে। এখন হিজাব বলতে শুধু মাথা ও ঘাড় ঢাকাকেই বোঝায়। আগে যা ছিল খিমারের কাজ। স্কুল কলেজে স্কার্ফ দিয়েও এর কাজ চলে যাচ্ছে। 
ভারতসহ বিভিন্ন দেশে প্রায়ই দেখা যায়, একটি মেয়ে পা থেকে বুক পর্যন্ত টাইট ফিট জিন্স-শার্টা পরে আছে, কিন্তু মাথার অংশটা একটি স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা। 
আসলে ইসলামের পর্দার বিধানের সাথে এই আধুনিক হিজাবের ন্যুনতম কোন সম্পর্ক নেই। এর দ্বারা পর্দার ফরজ বিধান আদায় হয় না আদৌ।
তবুও এই স্থানে আমরা একটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে চাই। তা হলো-
প্রতিটি রীতিরেওয়াজের একটা প্রেক্ষাপট থাকে। সে প্রেক্ষাপটের আবহটা পরবর্তী রীতির সাথে জড়িয়ে থাকে। এই হিজাবের সর্বশেষ যে চিত্রটি বর্তমানে পরিলক্ষিত হচ্ছে তা মূলত ধর্মীয় অনুভূতি থেকেই হচ্ছে। যে মেয়ে বা পরিবার মনে করে, আমরা একটু রক্ষণশীল। ধর্মের প্রতি আমাদের অনুরাগ আছে তারাই মূলত হিজাবের এই অনুশীলনটা অব্যাহত রেখেছে। এর দ্বারা সে ইসলামের বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতারই জানান দিচ্ছে। হয়তো দীনের সঠিক বুঝ না থাকায় মূল বিধান সে মানার সুযোগ পাচ্ছে না।
তাকে যারা দেখছে, তারাও তাই ভাবছে যে, মেয়েটি ইসলাম ফলো করে। সুতরাং এই জয়গা থেকেও হিজাবের মর্যাদা দিতে হবে। তাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।  যারা হিজাবকে আড় চোখে দেখে, তাদের সামনে একে প্রমোট করতে হবে। অন্যথায় মূলের সঙ্গে সঙ্গে হিজাবের আবেদনই হারিয়ে যাবে। দুদিন বাদে তার অস্তিত্ব রক্ষা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।

comment
Comments Added Successfully!