• ||
  • Friday, May 17th, 2024
  • ||

সফলতা অর্জনে আত্মসংযমের গুরুত্ব

সফলতা অর্জনে আত্মসংযমের গুরুত্ব

মাহফুজ আরেফীন

পৃথিবীতে খুশি বা আনন্দ, সুখ বা দুঃখ অনেক ক্ষেত্রেই আপেক্ষিক ব্যাপার। তাই উভয় অবস্থায়ই মানুষের উচিত সংযম অবলম্বন করা এবং নিজেকে বশে রাখার প্রবণতা গ্রহণ করা। অর্থাৎ নিজেকে এমনভাবে সংযত রাখা যে, খুশি ও আনন্দের ফলে যেন মনে-প্রাণে অহঙ্কার ও অহমিকার ভাব সৃষ্টি না হয়। অপরদিকে দুঃখ ও বেদনার সময়ও যেন অধীর, উদাস ও বিষণ্ন হয়ে থাকতে না হয়।
এই উভয় অবস্থায় সীমার ভেতরে থাকার একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে দৃঢ়তা ও আত্মসংযম। মানবজীবনের বহুমুখী প্রবৃত্তিকে সুসংহত করার এটাই একমাত্র পথ। এ প্রসঙ্গে আল-কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘যদি আমি নিজের পক্ষ হতে মানুষকে কোনো রহমত ও মেহেরবানি দান করি এবং পরে তা উঠিয়ে নিই, তাহলে সে নিরাশ-অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়। আর যদি কোনো মুসিবতের পরে নেয়ামতের আস্বাদ গ্রহণ করে, তখন বলে সকল অমঙ্গল দূর হয়ে গেছে। অবশ্যই সে তখন খুশি ও আনন্দে নিমগ্ন হয়। কিন্তু যারা নফসের ওপর ক্ষমতাবান এবং পুণ্যকর্মে যত্নশীল, তাদের জন্যই রয়েছে ক্ষমা এবং বৃহত্তর বিনিময়।’ (সুরা হুদ : ১০)
     
পৃথিবীতে অনেক অনিষ্টের মূলে রয়েছে রাগ বা ক্রোধ। মানুষ এ রাগের বশবর্তী হয়ে অনেক নির্দয় ও অত্যাচারমূলক কাজ করে ফেলে। এ রাগের ফলে মানুষ সম্মানিত হওয়ার পরিবর্তে লজ্জা ও অবজ্ঞার শিকার হয়। তাই কারও দ্বারা কোনো ক্ষতি বা অন্যায়মূলক কাজ হয়ে গেলেও রাগ না করে ক্ষমা করা বা ধৈর্য ধারণ করা। কারণ রাগ নয় ক্ষমায় রয়েছে মুমিনের সাফল্য। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কুস্তিতে বিজয়ী ব্যক্তি প্রকৃত বীর নয়; বরং ক্রোধের সময় যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে সে-ই প্রকৃত বীর।’ (বুখারি)। যারা নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে তারাই যোগ্য মানুষের মর্যাদা পায়।
     
আত্মসংযম এক ধরনের আত্মশৃঙ্খলা। এ শৃঙ্খলা বোধ বা চর্চা মানুষের জীবনে নানাভাবে সাহায্য করে। মূলত সংযমের চর্চা মানুষের বিষণ্নতা, ভয়, খারাপ কাজের প্রতি আসক্তি এবং যেকোনো ধরনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ থেকে মুক্তি পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংযম মানুষকে শেখায় ধ্বংসাত্মক, অতিরঞ্জিত, বদ্ধমূল ধারণা এবং নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকা।
     
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার এবং সারা জীবনের ভারসাম্য রক্ষার জ্ঞান দেয়। অতি আবেগকে দমন করে পরিমিতিবোধ বা সংযত আচরণ করতে সাহায্য করে। নিজের অসহায়ত্ব দূর করে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে। মানসিক ও আবেগীয় নিরাসক্তিকে সুস্পষ্ট করতে সাহায্য করে। মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। নেতিবাচক ধারণা ও ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে অবদান রাখে।
     
আত্মসংযমী মানুষ জীবনভর যেকোনো অবস্থায় সুদৃঢ়ভাবে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারে। ধর্মীয় হুকুম-আহকাম পালন করা সাধারণত মানুষের কাছে কঠিন বলে মনে হয়। এমতাবস্থায় জীবনভর ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সঙ্গে এ সকল কাজ আদায় করাই হচ্ছে প্রকৃত ধৈর্য ও আত্মসংযম। সকল কাজে আল্লাহর হুকুম ও আনুগত্য প্রকাশে মনে-প্রাণে লেগে থাকা একটি বড় পরীক্ষা। এজন্যই আল-কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নভোমণ্ডল-ভূমণ্ডল ও তন্মধ্যস্থ সবকিছুর প্রতিপালক, সুতরাং তারই ইবাদত-বন্দেগি করো এবং ধৈর্যসহ আনুগত্য প্রকাশ করো।’ (সুরা মারয়াম : ৬৫)।
     
পৃথিবীতে ভালো কাজ করার জন্য মানসিক সুদৃঢ়তা খুবই দরকার। অপরদিকে, খারাপ কাজ চিত্তাকর্ষক ও আরাম-আয়েশে পরিপূর্ণ হলেও তা পরিহার করাও অপরিহার্য। রাতে কোমল বিছানা পরিত্যাগ করে আল্লাহর দরবারে সিজদাবনত হওয়া, সুখস্বপ্নপূর্ণ নিদ্রা ত্যাগ করে দুরাকাত নামাজ আদায় করা, প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও রোজা পালন করা, দুঃখ ও বেদনার ভয় থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনকালে সত্য কথা বলা এবং সত্যমত ও পথকে কবুল করা এবং সত্যের পথে সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে মনের আনন্দে অগ্রসর হওয়া, সুদ ও অসদোপায়ে অর্থ উপার্জন পরিত্যাগ করা, রূপ ও যৌবনের অশুভ পাঁয়তারাকে বর্জন করা ইত্যাদি ভালো কাজ তখনই করা সহজ ও সম্ভব হবে যখন আমরা সংযম চর্চা করব। আর এর সুফল জীবনভর মানুষ লাভ করবেই, পরকালও হবে ফুলে-ফলে ও অকল্পনীয় প্রাপ্তিতে-প্রাচুর্যে সমৃদ্ধ।

 

comment
Comments Added Successfully!